১৮৭০ সালের পর প্যারিস ও লন্ডন কেন্দ্রিক ফাইনান্সিয়াল সেক্টর বৈশ্বিক রূপ
নেয়ার সময় থেকে আজ পর্যন্ত স্ক্যান্ডাল ও ফাইনান্সিয়াল ফ্রড (Financial
Fraud) কম হয়নাই। তাদের মধ্যে বিখ্যাত কয়েকটির নাম নিতে বললে 1MDB
স্ক্যান্ডালের নাম প্রথম দিকেই থাকা উচিত। আজকের লেখা এই 1MDB নিয়েই।
কুয়ালালামপুরের তুন রাজ্জাক এক্সচেঞ্জ এ 1MDB-র বিলবোর্ড। Source: Thomson Reuters |
প্রথমেই আসি 1MDB কি সেটা নিয়ে। 1MDB (1Malaysia Development Berhad) মালয়েশিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি সভরেন ওয়েলথ ফান্ড (Sovereign Wealth Fund) যেটির সূচনা হয় ২০০৯ সালে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজ্জাকের হাত ধরে। এখন, এই Sovereign Wealth Fund কি বস্তু? কোন দেশ বা রাষ্ট্রের অধীনে থাকা অনেক বড় ফান্ড হল এই সভরেন ওয়েলথ ফান্ড। যেসব দেশের আয় বা অর্থায়ন (Funding) কোন একটা বিশেষ উৎসের উপর নির্ভরশীল, ধরেন তেল, সেসব দেশ এই বিপুল পরিমাণ অর্থ এরকম ফান্ডে রাখে এবং তা থেকে বিভিন্ন খাতে ইনভেস্ট করে। সভরেন ওয়েলথ ফান্ড নিয়ে বলতে গেলে লেখা শেষ হবেনা, ছোট করে বললে এটা বড় একটা ধাপ্পা, আবার অনেকটা নোলানের The Dark Knight Rises এ উল্লেখ করা Necessary Evil ও বলতে পারেন।
এটা বলতেছি, কারণ ২০০৭-০৮ এর গ্লোবাল ফাইনান্সিয়াল ক্রাইসিসের টাইমে এই ফান্ডগুলা ইউএসের (USA) বড় বড় ব্যাংকগুলাকে দেউলিয়া হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেছিলো। এবার অন্যভাবে চিন্তা করেন, দেউলিয়া হওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়েছিলো মানে এইনা যে দান করছে, ব্যাংকগুলার একটা পারসেন্টেজ এই ফান্ডগুলার দখলে আছে। যেমন চাইনিজ একটা সভরেন ফান্ড Morgan Stanley এবং Blackstone এর ১০% এর মালিক, যার বাজারমূল্য মোট ১১.৬ বিলিয়ন ডলার। মোট ৭৮টা সভরেন ওয়েলথ ফান্ড আছে বিভিন্ন দেশে, বেশিরভাগই আবুধাবি, চায়না, সৌদি আরব মানে এশিয়াতে; ফান্ডগুলার মোট ইনভেস্টমেন্ট ৮ ট্রিলিয়ন ডলার, বিশ্বের জিডিপির ১০%। শুধু ব্যাংকেনা, সিলিকন ভ্যালির অনেক কোম্পানিতে আর স্টার্টআপে এদের ইনভেস্টমেন্ট আছে। বৈশ্বিক অর্থনীতির উপর এই এশিয়ান ফান্ডগুলার প্রভাব কেমন তা নিশ্চয় আর বোঝাতে হবেনা। কম সময়ে আরো জানতে চাইলে হাসান মিনহাজের (Hasan Minhaj) ভিডিওটি দেখতে পারেনঃ
অনেক দূরে চলে গেছি, মালয়েশিয়াতে ফেরত আসি 😛। 1MDB-র জন্মও হয়েছিল ওই উদ্দেশ্যেই; শুরুতে তেল থেকে প্রাপ্ত রয়্যালটি দেশের বিভিন্ন খাতে ইনভেস্ট করার লক্ষ্য থাকলেও পরে নিজের আর নিজের স্ত্রী, রসমাহ মানসুরের (Rosmah Mansor) পকেট ভারী করতেই তা ব্যবহার করেন মিঃ রাজ্জাক। এই ফান্ডকে অনেকটা পারসোনাল ব্যাঙ্ক একাউন্টের মত ব্যবহার করেছেন মিঃ রাজ্জাক। ২০১৬ সালে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিস (US Department of Justice) দাবি করে মোটের উপর ৪.৫ বিলিয়ন ডলার হাওয়া করেছেন রাজ্জাক সাহেব। ব্যাংকসহ আরো বিভিন্ন জায়গায় পাওনা বাকি ছিলো ১১ বিলিয়ন ডলারের মত (Source: https://www.bbc.com/news/world-asia-46341603)। মিঃ রাজ্জাক ও তার স্ত্রীর বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় হাজার হাজার ডলার সমমূল্যের ক্যাশ, অলংকার এবং "হ্যান্ডব্যাগ" 😝😝। Hermes Birkin ব্যাগের প্রতি রসমাহ মানসুরের অদম্য "প্যাশনের" জন্য তাকে "দি ব্যাগ লেডি" উপাধি দেয়া হয়েছে। এই প্রসংগে বলে রাখা ভাল, Hermes Birkin এর হ্যান্ডব্যাগ যেমন তেমন ব্যাগ না, ব্র্যান্ডটাই বিখ্যাত হল লাক্সারি হ্যান্ডব্যাগের জন্য; একেকটা ব্যাগের দাম ১১,৯০০ থেকে ৩০০,০০০ ডলার; ভিক্টোরিয়া ব্যাকহামের কাছে এরকম ১০০টা আছে বলে জানা গেছে। মিস মানসুরের কাছে অবশ্যই ১০০টার চেয়ে বেশি থাকবে। যারা "জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা" মুভিটা দেখেছেন তাদের হয়ত মনে আছে "ব্যাগবতী" দৃশ্যটার কথা; ঋত্বিক রোশন অভয় দেওলকে একটা ব্যাগ উপহার দেয়; ফারহান আখতার ঐ ব্যাগের নাম দেয় ব্যাগবতী, মজার ছলে সানগ্লাস আর হ্যাট পড়ায় দেয় যেন ব্যাগটার গরম না লাগে। ঐ ব্যাগটা Hermes কোম্পানির আরেকটা ব্র্যান্ড; Hermes Kelly ব্যাগ। হাতে সময় থাকলে নিচের লিঙ্কগুলো দেখতে পারেন; এতক্ষণ যা নিয়ে আলোচনা করলাম, আরো বিশদ ধারণা পাবেনঃ
i) মিঃ রাজ্জাক ও তার স্ত্রীর বাড়ি থেকে উদ্ধা্রকৃত জিনিসঃ https://www.bbc.com/news/world-asia-44625007
ii) মিস মানসুরের কালেকশনঃ http://www.arabnews.com/node/1318396/world
iii) Hermes এর বিভিন্ন ব্যাগের কালেকশনঃ https://www.spottedfashion.com/hermes-price-list-reference-guide/
1MDB ফান্ডটি মিঃ রাজ্জাকে যে নিজে উদ্যোগে করেছেন তা কিন্তু না; তাকে এই ফান্ড প্রতিষ্ঠাতে প্রভাবিত করেন মালয়েশিয়ান ফাইনান্সিয়ার জো লো (Jho Low)। মামা চালু আছে; 1MDB ফান্ডে সে নিজে কোন পজিশন নেয়নাই; তার সুইস ব্যাংক একাউন্ট দিয়ে টাকা 1MDB থেকে আমেরিকা চালান করে দিতো।
বাম দিক থেকে i) জো লো ii) নাজিব রাজ্জাক iii) রসমাহ মানসুর । Source: bbc |
জো লো পড়াশোনা করেছেন Wharton Business School এ, তার আগে লন্ডনের Harrow
School এ; ঐখানেই (সম্ভবত) নাজিব রাজ্জাকের সৎ ছেলে রিযা আজিজের (Riza
Aziz) সাথে বন্ধুত্ব হয় তার। ছেলের সাথে বন্ধুত্বের সূত্র ধরে পরে নাজিব
রাজ্জাক পর্যন্ত পৌঁছান ও তারপর কি কি করেছেন তা কিছু হলেও বোঝা গেছে এর
মধ্যে। এই প্রসঙ্গে বলে রাখি, রিযা আজিজ চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান রেড
গ্রানাইট পিকচার্সের (Red Granite Pictures) সহপ্রতিষ্ঠাতা যেটা কিনা
Wolf of Wall Street ও Dumb and Dumber To - এই দুটি বিখ্যাত মুভির
প্রযোজক।
কাজের জন্যই হোক আর অবাধ, উচ্ছল জীবনযাপনের জন্য হোক, জো লোর
ফ্রেন্ডলিস্ট বেশ সমৃদ্ধ ও পশ। রিযা আজিজের কথাতো বললাম, লিও ডি ক্যাপ্রিও, প্যারিস হিলটন, জিজি হাদিদ (😍), জেমি ফক্স, এলিসিয়া কিস, লিন্ডসি লোহান - সাথে Goldman Sachs এর টপ ব্যাংক কর্মকর্তারা (ফ্রেন্ডলিস্টও বানাইছে একখান!!!)। তার গার্লফ্রেন্ডের লিস্টটাও বেশ - অস্ট্রেলিয়ান সুপার মডেল মিরান্ডা কের (Miranda Kerr), তাইওয়ানিজ গায়িকা ও অভিনেত্রী এল্ভা সাও (Elva Hsiao) প্রমুখ। জো লো মামা যে শুধু বন্ধুদের সাথে পার্টি করতেন তা না, তিনি বেশ বন্ধুবৎসল এবং শৌখিন ও শিল্পমনা একজন মানুষ; বর্ষপ্রাচীন দামি অলংকার এবং মনেট, পিকাসো, ভ্যান গগ - এনাদের পেইন্টিং সংগ্রহে রাখতেন এবং বন্ধুদের উপহার হিসেবে দিতেন 😜😜। এখন কেমন আছেন জানা যায়নাই'; কয়েক বছর ধরে পলাতক (সম্ভবত চীনে)।
জো লোর সাথে Goldman Sachs এর যেসব ব্যাংকারদের খাতির ছিলো, ঘুরিয়ে বললে যারা এই স্ক্যান্ডালের সাথে জড়িত তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন - টিমোথি লেইস্নার (Timothy Leissner) এবং রজার ইং (Roger Ng)। ২০১২ ও ২০১৩ সালে মিঃ লেইস্নার Goldman Sachs এর হয়ে 1MDB ফান্ডটির জন্য ৬.৫ বিলিয়ন ডলারের বন্ড বিক্রির ব্যবস্থা করে দেন। যারা বন্ড সম্পর্কে জানেননা - লিখে দিচ্ছি Investopedia থেকে - "A bond is a fixed income
instrument that represents a loan made by an investor to a borrower. A bond could be thought of as an instrument of contract between the
lender and borrower that includes the details of the loan and its payments.
Bonds are used by companies, municipalities, states, and sovereign governments
to finance projects and operations. Owners of bonds are debt-holders, or
creditors, of the issuer. The bond issuer is obligated to pay a specified amount of money at specified future dates to the investor."
এই ক্ষেত্রে 1MDB হল issuer, বিনিয়োগকারী বা investor তো অনেকেই ছিলো; Goldman Sachs হল আন্ডাররাইটার (Underwriter) বা আরো সহজে বললে পুরা ব্যাপারটা ম্যানেজ করছে তারা। এই ৬.৫ বিলিয়ন ডলারের বন্ডের ডিল ম্যানেজ করতে লেইস্নারকে সাহায্য করেন মিঃ ইং। ম্যানেজমেন্ট ফি হিসেবে Goldman এর ৬০০ মিলিয়ন ডলারের কামাইতো আছেই সাথে এই ডিলের পরে মিঃ লেইস্নার Goldman এর সাউথইস্ট এশিয়া রিজিওনের চেয়ারম্যান পদে উত্তীর্ণ হন এবং (আরো আছে) বিয়ে করেন জো লো মামারই আরেক বন্ধু, মডেল ও ফ্যাশন ডিজাইনার কিমোরা লিকে (Kimora Lee)। আসল আন্ডাররাইটার হচ্ছে এই জো লো; কোম্পানি বানাইয়া টাকাও কামাইছে, সুইস ব্যাংকে টাকা সরাইছে, ফুর্তিও করছে, আবার এক বন্ধুর সাথে আরেক বন্ধুর মিল করাইয়া তাদের জীবনের গতিও করে দিছে; এরকম বন্ধুবৎসল ফাইনান্সিয়ার পৃথিবীর ইতিহাসে নাই 😝😝। বাই দ্যা ওয়ে, ইং সাহেবের কোন গতি জো লো সাহেব করছেন নাকি জানিনা, স্ক্যান্ডাল সামনে আসার কয়েক মাস আগে উনি Goldman ছেড়ে দেন।
এছাড়াও আরো যাদের নাম বলতে হবে তারা হচ্ছেন - ১) এন্ড্রি ভিলা (Andrea Vella) - ইতালিয়ান ব্যাংকার, Goldman এর ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকিং ডিপার্টমেন্টের এশিয়া রিজিওনের কোহেড ২) জেসমিন লু সোয়ান (Jasmine Loo Ai Swan) - উপরোল্লিখিত বন্ড ডিলের প্রধান লিগ্যাল পয়েন্ট অফ কন্টাক্ট। Goldman Sachs এর ব্যাংকারদের কীর্তিকলাপ, কে কেমন সাজা পেয়েছেন ও পাবেন বিস্তারিত নিচের লিংক থেকে জানতে পারেন -
i) Goldman and its role in 1MDB: https://www.bbc.com/news/business-47148641
সবশেষে আসি এই 1MDB স্ক্যান্ডালটি যাদের মাধ্যমে সামনে আসে; অর্থাৎ যারা কিনা ছিলেন whistleblower। প্রথমেই যার নাম না বললেই না তিনি হলেন ব্রিটিশ সাংবাদিক ক্লেয়ার রিউক্যাসেল-ব্রাউন (Clare Rewcastle-brown)। ২০১০ সাল থেকে তিনি sarawalkreport নামের একটি ওয়েবসাইটে মালয়েশিয়ার এলিট পলিটিশিয়ানদের নিয়ে লেখালেখি শুরু করেন (Link: http://www.sarawakreport.org/)। রাজনীতিবিদদের জীবনযাপন, তাদের আয়ের উৎস, উৎসগুলো কোন সন্দেহজনক অর্থচুক্তির (Shadowy Dealings) সাথে জড়িত নাকি - এসব খোঁজা এবং প্রকাশ করার দিকে ঝোঁক ছিলো তার। ২০১৩ সালে Wolf of Wall Street মুভিটি মুক্তি পাওয়ার পর যখন তিনি জানতে পারেন নাজিব রাজ্জাকের সৎছেলে এই মুভির প্রযোজক, তখন থেকেই তিনি 1MDB এবং তার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করেন। তথ্য সংগ্রহের সুত্র ধরে একসময় তিনি জানতে পারেন PetroSaudi-1MDB partnership এর কথা; যার মাধ্যমে দুটি কোম্পানির Joint Venture (JV) partnership agreement এর নামে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডলার মিঃ নাজিব রাজ্জাকের একাউন্টে জমা হয়। PetroSaudi কোম্পানি নিয়ে কিছু বলি - এটি একটি অয়েল প্রোডাকশন কোম্পানি (Oil Production company); দুই বন্ধু তারেক ওবায়েদ (Tarek Obaid) ও প্যাট্রিক মাহোনি (Patrick Mahony) এই কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে এই কোম্পানির অংশ হন হাভিয়ের জাস্টো (Xavier Justo), তারেক ওবায়েদের আরেক বন্ধু - যিনিই প্রথম এই 1MDB-র গোমর ফাঁস করেন। এম্নে এম্নে করেননাই অবশ্য; এই JV কোম্পানির অংশ হিসেবে যে পরিমাণ অর্থ তাকে দেয়ার কথা ছিলো তা থেকে তাকে বঞ্চিত করেছিলেন ওবায়েদ ও মাহোনি। তার উপর তাকে ভেনেজুয়েলাতে নতুন প্রজেক্ট দেখার জন্য পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিলো যাতে 1MDBর সাথে জড়িত কার্যকলাপ থেকে তাকে দূরে রাখা যায়। যাই হোক, এই JV partnership এর নামে মিঃ রাজ্জাকের একাউন্টে জমা হওয়া অর্থ, JV কোম্পানি হিসেবে PetroSaudi-র যে অর্থ পাওয়ার কথা ছিলো (প্রথমে ২.৫ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি হলেও পরে সেটা হয় ১ বিলিয়নের, যার মধ্যে ৩০০ মিলিয়ন হাতে পায় PetroSaudi) - ইত্যাদি মেলানোর পর মিস ক্লেয়ার যোগাযোগ করেন জাস্টোর সাথে এবং তাকে প্ররোচিত করেন স্ক্যান্ডালের ব্যাপারে মুখ খুলতে। পরবর্তীতে ক্লেয়ার ও The Edge Markets (মালয়েশিয়ান বিজনেস ও ফাইন্সিয়াল নিউজ পাব্লিশার) - এর কাছে ২ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে PetroSaudi - 1MDB JV সংক্রান্ত মানি ট্রেইল এবং ২৩০,০০০ ইমেইল বিক্রি করে দেন মিঃ জাস্টো। ২০১৫-১৬ সালে যখন 1MDB-র ব্যাপারে তোলপাড় শুরু হয়, তখন অনেকের সাথে জাস্টোকেও গ্রেফতার করে পুলিশ; পরে মুক্তি পেলেও জিজ্ঞাসাবাদের অধীনে আছেন এখনো।
1MDB নিয়ে আরো জানতে চাইলে বা কেউ যদি গবেষণা করতে চান, মিস ক্লেয়ারের sarawalkreport ওয়েবসাইটে সব পাবেন (Link: http://www.sarawakreport.org/tag/1mdb ); এই মহিলা সাইকো, জাস্ট সাইকো।
জো লো মামার বন্ধুবাৎসল্যের আরেকটা পরিচয় দিয়ে শেষ করছি; PetroSaudi-র দুই মালিকের একজন, দুই বাচ্চার বাপ, প্যাট্রিক মাহোনিকে নতুন গতি করে দিয়েছিলেন জো লো; তার "বন্ধু" লিন্ডসি লোহানের সাথে। এরকম উদার মানুষ পৃথিবীতে পাওয়া দুস্কর।
"Wolf of Wall Street - quite interesting a movie -
A movie about a financial fraud (Jordan Belfort)
funded by another financial fraud (Jho Low) 😛😛."
মিঃ রিযা আজিজ (ডানে) । Source: Business Insider |
জো লো ও তার বন্ধুরা - জিজি হাদিদ, মিরান্ডা কের, প্যারিস হিল্টন, লিও ডি ক্যাপ্রিও, এল্ভা সাও, জেমি ফক্স, এলিসিয়া কিস |
এই ক্ষেত্রে 1MDB হল issuer, বিনিয়োগকারী বা investor তো অনেকেই ছিলো; Goldman Sachs হল আন্ডাররাইটার (Underwriter) বা আরো সহজে বললে পুরা ব্যাপারটা ম্যানেজ করছে তারা। এই ৬.৫ বিলিয়ন ডলারের বন্ডের ডিল ম্যানেজ করতে লেইস্নারকে সাহায্য করেন মিঃ ইং। ম্যানেজমেন্ট ফি হিসেবে Goldman এর ৬০০ মিলিয়ন ডলারের কামাইতো আছেই সাথে এই ডিলের পরে মিঃ লেইস্নার Goldman এর সাউথইস্ট এশিয়া রিজিওনের চেয়ারম্যান পদে উত্তীর্ণ হন এবং (আরো আছে) বিয়ে করেন জো লো মামারই আরেক বন্ধু, মডেল ও ফ্যাশন ডিজাইনার কিমোরা লিকে (Kimora Lee)। আসল আন্ডাররাইটার হচ্ছে এই জো লো; কোম্পানি বানাইয়া টাকাও কামাইছে, সুইস ব্যাংকে টাকা সরাইছে, ফুর্তিও করছে, আবার এক বন্ধুর সাথে আরেক বন্ধুর মিল করাইয়া তাদের জীবনের গতিও করে দিছে; এরকম বন্ধুবৎসল ফাইনান্সিয়ার পৃথিবীর ইতিহাসে নাই 😝😝। বাই দ্যা ওয়ে, ইং সাহেবের কোন গতি জো লো সাহেব করছেন নাকি জানিনা, স্ক্যান্ডাল সামনে আসার কয়েক মাস আগে উনি Goldman ছেড়ে দেন।
কিমোরা লি ও টিম লেইস্নার। Source: bbc |
i) Goldman and its role in 1MDB: https://www.bbc.com/news/business-47148641
সবশেষে আসি এই 1MDB স্ক্যান্ডালটি যাদের মাধ্যমে সামনে আসে; অর্থাৎ যারা কিনা ছিলেন whistleblower। প্রথমেই যার নাম না বললেই না তিনি হলেন ব্রিটিশ সাংবাদিক ক্লেয়ার রিউক্যাসেল-ব্রাউন (Clare Rewcastle-brown)। ২০১০ সাল থেকে তিনি sarawalkreport নামের একটি ওয়েবসাইটে মালয়েশিয়ার এলিট পলিটিশিয়ানদের নিয়ে লেখালেখি শুরু করেন (Link: http://www.sarawakreport.org/)। রাজনীতিবিদদের জীবনযাপন, তাদের আয়ের উৎস, উৎসগুলো কোন সন্দেহজনক অর্থচুক্তির (Shadowy Dealings) সাথে জড়িত নাকি - এসব খোঁজা এবং প্রকাশ করার দিকে ঝোঁক ছিলো তার। ২০১৩ সালে Wolf of Wall Street মুভিটি মুক্তি পাওয়ার পর যখন তিনি জানতে পারেন নাজিব রাজ্জাকের সৎছেলে এই মুভির প্রযোজক, তখন থেকেই তিনি 1MDB এবং তার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করেন। তথ্য সংগ্রহের সুত্র ধরে একসময় তিনি জানতে পারেন PetroSaudi-1MDB partnership এর কথা; যার মাধ্যমে দুটি কোম্পানির Joint Venture (JV) partnership agreement এর নামে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডলার মিঃ নাজিব রাজ্জাকের একাউন্টে জমা হয়। PetroSaudi কোম্পানি নিয়ে কিছু বলি - এটি একটি অয়েল প্রোডাকশন কোম্পানি (Oil Production company); দুই বন্ধু তারেক ওবায়েদ (Tarek Obaid) ও প্যাট্রিক মাহোনি (Patrick Mahony) এই কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে এই কোম্পানির অংশ হন হাভিয়ের জাস্টো (Xavier Justo), তারেক ওবায়েদের আরেক বন্ধু - যিনিই প্রথম এই 1MDB-র গোমর ফাঁস করেন। এম্নে এম্নে করেননাই অবশ্য; এই JV কোম্পানির অংশ হিসেবে যে পরিমাণ অর্থ তাকে দেয়ার কথা ছিলো তা থেকে তাকে বঞ্চিত করেছিলেন ওবায়েদ ও মাহোনি। তার উপর তাকে ভেনেজুয়েলাতে নতুন প্রজেক্ট দেখার জন্য পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিলো যাতে 1MDBর সাথে জড়িত কার্যকলাপ থেকে তাকে দূরে রাখা যায়। যাই হোক, এই JV partnership এর নামে মিঃ রাজ্জাকের একাউন্টে জমা হওয়া অর্থ, JV কোম্পানি হিসেবে PetroSaudi-র যে অর্থ পাওয়ার কথা ছিলো (প্রথমে ২.৫ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি হলেও পরে সেটা হয় ১ বিলিয়নের, যার মধ্যে ৩০০ মিলিয়ন হাতে পায় PetroSaudi) - ইত্যাদি মেলানোর পর মিস ক্লেয়ার যোগাযোগ করেন জাস্টোর সাথে এবং তাকে প্ররোচিত করেন স্ক্যান্ডালের ব্যাপারে মুখ খুলতে। পরবর্তীতে ক্লেয়ার ও The Edge Markets (মালয়েশিয়ান বিজনেস ও ফাইন্সিয়াল নিউজ পাব্লিশার) - এর কাছে ২ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে PetroSaudi - 1MDB JV সংক্রান্ত মানি ট্রেইল এবং ২৩০,০০০ ইমেইল বিক্রি করে দেন মিঃ জাস্টো। ২০১৫-১৬ সালে যখন 1MDB-র ব্যাপারে তোলপাড় শুরু হয়, তখন অনেকের সাথে জাস্টোকেও গ্রেফতার করে পুলিশ; পরে মুক্তি পেলেও জিজ্ঞাসাবাদের অধীনে আছেন এখনো।
PetroSaudi - 1MDB পার্টি। Source: South China Morning Post |
ব্যাংককের জেলে যাওয়ার আগে জাস্টো। Source: South China Morning Post |
সাংবাদিক ক্লেয়ার রিউক্যাসেল-ব্রাউন। Source: AFP |
No comments:
Post a Comment