"দোয়েল" (Doel) ল্যাপটপের কথা কি মনে আছে? এটি ছিলো বাংলাদেশে এসেম্বল করা প্রথম ল্যাপটপ। টেলিফোন শিল্প সংস্থা (TSS) ২০১১ জাতীয় শিক্ষা কার্যক্রমের অধীনে একটি প্রজেক্টের আওতায় ঐ বছরের অক্টোবর মাসে বাজারে আনে দোয়েল ল্যাপটপ। অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের ৪টি ভিন্ন মডেলের ল্যাপটপ সেই সময় বাজারে এনেছিল সংস্থাটি। ল্যাপটপটির সর্বনিম্ন মূল্য ছিলো ১০,০০০ টাকা বা ১৩০ ডলার বা ৮৩ পাউন্ড; বাকি মডেলগুলোর মূল্য ছিল যথাক্রমে ১৩৫০০, ২২০০০ ও ২৬০০০ টাকা।
সেই সময়টায় মানে ২০১০-১১ সালের দিকে এশিয়ার দেশগুলো ইলেক্ট্রনিক্স মার্কেটে নিজেদের বানানো পণ্য আনার ব্যাপারে তৎপর হয়ে উঠেছিলো। ইন্টেলের প্রসেসরের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে চীন কম্পিউটার প্রসেসর বানানোর উদ্যোগ নেয়। ভারতও নিজেদের তৈরি ট্যাবলেট মার্কেটে আনার চেষ্টা করেছিলো। বাংলাদেশও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের কম দামের ল্যাপটপ দেয়ার লক্ষ্যে লোকালি এসেম্বলকৃত ল্যাপটপ বাজারে আনে। TSS, ঢাকাভিত্তিক 2M Corporation এবং মালয়েশিয়ান Thin Film Transistor (TFT) Technology সম্মিলিতভাবে এই প্রজেক্টের দায়িত্বে ছিলো। শুরুতে মাত্র ১০% পার্টস বাংলাদেশে তৈরি হলেও ধীরে ধীরে ৬০% পার্টস বাংলাদেশে প্রস্তুত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো।
সবচেয়ে কম মূল্যের মডেলটির নাম ছিল Doel 2102; 800MHz VIA 8650 প্রসেসর; 512MB র্যাম; 10.1" 1024x600 ডিসপ্লে, 16GB ফ্ল্যাশ মেমোরি। ল্যাপটপটির ইন্টারনাল স্টোরেজ ছিলোনা, কিন্তু একটি এসডি কার্ডের স্লট ছিল। পরের মডেলটি অর্থাৎ ১৩,৫০০ টাকা দামের মডেলটির নাম ছিলো Doel 0703, যার স্পেসিফিকেশন কিছুটা বেটার ছিলো; বেটার স্ক্রিন, Atom N456 প্রসেসর, 1024MB র্যাম, 250GB হার্ডডিস্ক এবং তুলনামূলক বেটার ওয়েবক্যাম। এছাড়াও অপারেটিং সিস্টেম ছিলো লিনাক্স, আবার অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম এডজাস্ট করার সুবিধাও ছিলো।
পতনের কারণসমূহ
২০১১ সালের বাজারে আনার পর ২ বছর যেতে না যেতেই প্রোডাকশন বন্ধ হয়ে যায় 'দোয়েল' এর। বন্ধ হওয়ার কারণ হিসেবে প্রজেক্টের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ না পাওয়াকে দায়ী করা হয়। কনফিগারেশন ভাল না হওয়ার কারণে এই ল্যাপটপের চাহিদাও ছিল অনেক কম। ২০১৩ সালে প্রকাশিত TSS এর বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দুই বছরে মাত্র ২৮,৬২২টি ল্যাপটপ বিক্রি করতে সক্ষম হয়েছে TSS। এর মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়-ই নেয় দুই-তৃতীয়াংশ বা ১৭,৮১৫টি।
সবচেয়ে বড় ধাক্কা আসে এই প্রজেক্টের অন্য দুই পার্টনার, 2M Corp ও TFT -এর কাছ থেকে। দোয়েল ল্যাপটপ বাজারে আনার এক বছর যেতে না যেতে তারা এই প্রজেক্ট থেকে সরে দাঁড়ায়। এই প্রজেক্ট ভেঞ্চারের ৭৫% মালিকানা ছিলো তাদের কাছে। যার দরুন এই প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্টে বেশ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় TSS-কে, ফলশ্রুতিতে এসেম্বল করা ল্যাপটপের উল্লেখযোগ্য অংশ অবিক্রীত থেকে যায়। ২০১৩ সালের TSS এর বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, দুই বছরে ২৮,০০০ ল্যাপটপ বিক্রির বিপরীতে ৪২,১৯৫টি ল্যাপটপ এসেম্বল করার জন্য পার্টস কিনা হয়, তার মধ্যে এসেম্বল করা হয় ৩৭,০৫৯টি।
Source: Dhaka Tribune |
Problem faced by DOEL laptop user Source: Hoque, Fauji & Balo; Enactment of a Local Laptop Brand: A Study on DOEL Laptop |
Source: www.doel.com.bd |
No comments:
Post a Comment