Monday, September 7, 2020

Jio Investment Mania - কেন বিশ্বের টেক জায়ান্টগুলো ইনভেস্ট করছে Jio তে

করোনা ভাইরাসের প্রকোপে ক্ষুদ্র ও মাঝারী আকারের ব্যবসায়ীদের যেখানে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা, সেখানে টেলিকম ও ই-কমার্সসহ কনজাম্পশন-বেইজড প্রোডাক্ট সরবরাহকারী বড় বড় কোম্পানীর মালিকরা বহুগুণে তাদের ব্যবসা বাড়িয়ে নিয়েছেন। Reliance Industries Ltd. (RIL) এর মালিক মিঃ মুকেশ আম্বানী তাদের মধ্যেই একজন। এই করোনাকালে তিনি এসে গিয়েছেন বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ ধনীর এলিট লিস্টে। গত ২২শে এপ্রিল থেকে শুরু করে ১৫ই জুলাই রিলায়েন্সের এজিএম পর্যন্ত সর্বমোট ১৩টি কোম্পানি রিলায়েন্সের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, Jio Platforms Ltd. (JPL) - এ ইনভেস্ট করার ঘোষণা দিয়েছে। এজিএমের বেশ কয়েক সপ্তাহ আগে থেকে সপ্তাহ প্রতি ১টির বেশি ডিল পকেটে পুরেছেন মিঃ আম্বানী। কেন হঠাৎ করে বিশ্বের বড় কোম্পানিগুলো ইনভেস্ট করছে Jio Platforms এ? এইসব নিয়েই আলোচনা করবো আজকের লেখায়।

History of Jio Platforms Ltd. (JPL)

Jio Platforms Ltd. হচ্ছে রিলায়েন্সের ডিজিটাল বিজনেস সাবসিডিয়ারি। ২০১৯ এর অক্টোবরে রিলায়েন্স তাদের ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনের অংশ হিসেবে Jio Platforms প্রতিষ্ঠা করে। বিভিন্ন কারণে রিলায়েন্সের টেলিকম সাবসিডিয়ারি Reliance Jio আলোচনায় থাকলেও অন্যান্য ডিজিটাল বিজনেসগুলো বেশ আড়ালেই ছিল। অবশেষে গতবছর রিলায়েন্স, তার টেলিকম বিজনেস ও অন্যান্য ডিজিটাল বিজনেসগুলো একই প্ল্যাটফর্মে অন্তর্ভুক্ত করে আলাদা ডিজিটাল বিজনেস সাবসিডিয়ারি বানিয়ে ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নেয়।

Companies under Jio Platforms

Source: RIL Annual Report FY2020

  1. Reliance Jio Infocomm Ltd. ছোটভাই অনিল আম্বানির সাথে পারিবারিক ও ব্যবসায়িক কলহের সূত্রে প্রতিষ্ঠিত নন-কম্পিট এগ্রিমেন্টের কারণে মুকেশ আম্বানির এনার্জি ও টেলিকমসহ আরো কিছু ব্যবসায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল। আবার অনিল আম্বানির এনার্জি ও টেলিকম ব্যবসার অবস্থা ছিলো নাজুক। সুযোগটা হারাতে চাননি মুকেশ আম্বানি। ২০১০ সালে ভারতে Broadband Wireless Access (BWA) এর ফোরজি লাইসেন্সের নিলামের কিছুদিন আগে ছোটভাইয়ের ডুবতে বসা এনার্জি বিজনেস বাঁচাতে এগিয়ে আসেন তিনি। বিনিময়ে ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত নন-কম্পিট এগ্রিমেন্টটি রদ করান তিনি। যার ফলে টেলিকম ব্যবসায় প্রবেশের আর কোন বাধা ছিলোনা তার। ফোরজি লাইসেন্সের নিলামে Infotel Broadband Services Ltd. (IBSL) নামের এক অখ্যাত ব্রডব্যান্ড কোম্পানি ১২,৮৪৮ কোটি রুপি বা ২.৭ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে স্পেক্ট্রাম কিনে নেয়। নিলাম শেষ হওয়ার ঘন্টাখানেক পরে কোম্পানিটির ৯৫% শেয়ার কিনে নেন মুকেশ আম্বানি। পরবর্তীতে ২০১৩ সালের জানুয়ারীতে Infotel Broadband এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় Reliance Jio Infocomm Ltd. বা Reliance Jio (RJio)। পরে ২০১৫ সালে স্বল্প আকারে এবং ২০১৬ সালে পুরোদমে রিলায়েন্সের টেলিকম সাবসিডিয়ারি হিসাবে ব্যবসা শুরু করে Jio।
  2. MyJio হচ্ছে Jio'র সুপার অ্যাপ, অর্থাৎ গ্রাহক অনেকগুলো সার্ভিস একসাথে এই অ্যাপে পায়। বেসিক টেলিকম সার্ভিস যেমন ভয়েস ও ডাটা প্ল্যান ঠিক করা, রিচার্জ করা, বিল পেমেন্ট তো আছেই, এসবের সাথে গান শুনা, মুভি, টিভি শো দেখা এসব সুবিধাও পাওয়া যায় এই সুপার অ্যাপে। ২০১৬ সালে প্লে স্টোরে এসে মাত্র দেড় বছরের মধ্যে ১০০ মিলিয়ন ডাউনলোড অতিক্রম করে MyJio অ্যাপ। এই বছরের শুরুতে, জানুয়ারির ১৪ তারিখে, MyJio অ্যাপে 'Jio Mini Apps" নামে একটি ফিচার আনা হয় যেখানে Jio Platforms এর আরো কিছু সার্ভিস যেমন - JioCloud (Cloud Service), JioTV (Streaming Service), JioCinema এবং JioEngage (Game Playing Platform), ইত্যাদি সংযুক্ত করা হয়। একই দিনে MyJio অ্যাপে UPI payment চালু করার মাধ্যমে ভারতে প্রথম টেলিকম অপারেটর হিসেবে এই পেমেন্ট সার্ভিস দেয়া শুরু করে Jio। UPI বা Unified Payment Interface এর মাধ্যমে মোবাইল প্ল্যাটফর্মে তাৎক্ষণিকভাবে ইন্টার-ব্যাঙ্ক ট্রান্সেকশন করা সম্ভব হয়। এক্ষেত্রে বলে রাখা ভাল, UPI payment provider হিসেবে ট্রাকশন পেতে Google Pay, Paytm, Phone Pe, ইত্যাদি টপ প্লেয়ারদের সাথে প্রতিযোগিতা করতে হবে Jio কে।
  3. JioTV এবং JioTV+ এর মাধ্যমে স্ট্রিমিং সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রিতে পা রেখেছে রিলায়েন্স। JioTV-এর মাধ্যমে Jio-র কাস্টমাররা বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল ও প্রোগ্রামসমূহ স্মার্ট ফোন ও ট্যাবলেটে দেখতে পারে।
  4. JioNews হচ্ছে নিউজ চ্যানেল, ৮০০টিরও বেশি ম্যাগাজিন ও ৩০০টির বেশি নিউজপেপার সম্বলিত Jio Platforms এর একটি  অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন।
  5. JioCloud হচ্ছে ক্লাউড স্টোরেজ, ডাটা ব্যাকআপ এবং ফাইল ট্রান্সফার সার্ভিস সম্বলিত Jio Platforms এর অ্যাপ্লিকেশন।
  6. JioCall দিয়ে টুজি, ত্রি-জি এবং ফোরজি-এলটিই সাপোর্টেড স্মার্টফোনে ফোরজি-এইচডি ভয়েস কল এবং ভিডিও কল করা যায়। এছাড়াও Rich Communication Services (RCS) সুবিধার মাধ্যমে কলের মধ্যে থাকা অবস্থায় লোকেশন শেয়ারিং, ডুডল এড করা, গ্রুপ চ্যাট করা, ইত্যাদিও করা যায়।
  7. JioChat এর মাধ্যমে ডাটা কলিং, ভিডিও কলিং ও চ্যাটিং ফ্যাসিলিটি দিয়ে আসছে Jio। এছাড়াও JioMeet এর মাধ্যমে ভিডিও কনফারেন্সিং ও ওয়েব কনফারেন্সিং সার্ভিস দিচ্ছে Jio।
  8. এসব ছাড়াও JioHealthHub (হেলথকেয়ার সার্ভিস অ্যাপ), JioSecurity (মোবাইল সিকিউরিটি সার্ভিস), JioSwitch (ফাইল ট্রান্সফার ও শেয়ারিং অ্যাপ), JioBrowser, ইত্যাদি বিভিন্ন সার্ভিস প্রদানের মাধ্যমে স্ট্রং ব্র্যান্ড পজিশনিং করতে সক্ষম হয়েছে Jio।
  9. JioMoney হচ্ছে Jio-র ডিজিটাল ওয়ালেট যা দিয়ে ফোনে অর্থ জমা রাখা এবং তা দিয়ে পণ্য কেনাবেচার ক্ষেত্রে পেমেন্ট করার সুবিধা পাওয়া যায়।
  10. JioMart এর মাধ্যমে এই বছর ই-কমার্স বিজনেসে প্রবেশ করলো রিলায়েন্স। ক্ষুদ্র ও মাঝারী ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা এই শপিং পোর্টালের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করে WhatsApp Business App এ সংযুক্ত থেকে অর্ডার গ্রহণ করবে ও পণ্য বিক্রয় করবে। আর ক্রেতারা WhatsApp-এর মাধ্যমে পণ্য অর্ডার দিতে পারবে। আরেক ই-কমার্স জায়ান্ট Amazon ইতোমধ্যে JioMart এ বিনিয়োগের ইংগিত দিয়েছে।
  11. উল্লেখযোগ্য Merger & Acquisitions:
    • JioSaavn (Jio-Saavn): অনলাইন মিউজিক স্ট্রিমিং সার্ভিস প্ল্যাটফর্ম
    • Jio-Embibe: ডিজিটাল এডুকেশন প্ল্যাটফর্ম
    • Jio-Radisys: 5G ও IoT-ভিত্তিক সার্ভিসের জন্য সফটওয়্যার সলিউশন্স কোম্পানি

Timeline of Jio Investment Mania
  • ২২শে এপ্রিল সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্ট Facebook, Jio Platforms এ ৪৩,৫৭৪ কোটি রুপি বা ৫.৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়, যা প্ল্যাটফর্মটির ১০% শেয়ারের সমতুল্য। এটি ভারতের টেক সেক্টরে সবচেয়ে বড় Foreign Direct Investment (FDI)।
  • ২রা মে টেক সেক্টরে বিনিয়োগকারী ফার্ম Silver Lake Partner্‌ Jio Platforms এর ১.২% শেয়ার কিনে নেয়ার মাধ্যমে ৫,৬৫৬ কোটি রুপি বা ০.৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়।
  • ৮ই মে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রাইভেট ইক্যুইটি ফার্ম Vista Equity Partners, Jio Platforms এর ২.৩% শেয়ার কিনে নেয়ার ঘোষণা দেয়, যার মূল্য ১১,৩৬৭ কোটি রুপি বা ১.৫ বিলিয়ন ডলার।
  • ১৭ই মে General Atlantic, Jio Platforms এর ১.৩% শেয়ার কিনে নেয়ার মাধ্যমে ৬,৫৯৮ কোটি রুপি বা ০.৯ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়।
  • ২২ই মে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আরেক প্রাইভেট ইক্যুইটি ফার্ম KKR & Co., Jio Platforms এর ২.৩% শেয়ার কিনে নেয়ার ঘোষণা দেয়, যার মূল্য ১১,৩৬৭ কোটি রুপি বা ১.৫ বিলিয়ন ডলার।
  • ৫ই জুন, আবুধাবীভিত্তিক সভরেইন ইনভেস্টর Mubadala Investment Company, Jio Platforms এ ৯,০৯৪ কোটি রুপি বা ১.২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়, যা প্ল্যাটফর্মটির ১.৯% শেয়ারের সমতুল্য। একই দিনে Silver Lake Partner্‌s আরো ৪,৫৪৭ কোটি রুপি বিনিয়োগের মাধ্যমে ০.৯% শেয়ার কিনে নেয়ার ঘোষণা দেয়।
  • ৭ই জুন Abu Dhabi Investment Authority (ADIA), Jio Platforms এর ১.২% শেয়ার কিনে নেয়ার মাধ্যমে ৫,৬৮৪ কোটি রুপি বা ০.৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়।
  • ১৩ই জুন অল্টারনেটিভ অ্যাসেট কোম্পানি TPG, Jio Platforms এ ৪,৫৪৬ কোটি রুপি বা ০.৬ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়, যা প্ল্যাটফর্মটির ০.৯% শেয়ারের সমতুল্য। একই দিনে কনজিউমার-কোম্পানি ফোকাসড প্রাইভেট ইক্যুইটি ফার্ম L Catterton ১,৮৯৫ কোটি রুপি বিনিয়োগের মাধ্যমে ০.৪% শেয়ার কিনে নেয়ার ঘোষণা দেয়।
  • ১৮ই জুন সৌদি আরবের একটি পাব্লিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড, Jio Platforms এর ২.৩% শেয়ার কিনে নেয়ার মাধ্যমে ১১,৩৬৭ কোটি রুপি বা ১.৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়।
  • ৩ই জুলাই বিশ্ববিখ্যাত সিপিউ মেকার Intel এর ইনভেস্টমেন্ট সাবসিডিয়ারি, Intel Capital, Jio Platforms এ ১,৮৯৫ কোটি বা ০.৬ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের মাধ্যমে প্ল্যাটফর্মটির ০.৪% শেয়ার কেনার ঘোষণা দেয়।
  • ১২ই জুলাই বিশ্ববিখ্যাত চিপমেকার Qualcomm এর ইনভেস্টমেন্ট সাবসিডিয়ারি, Qualcomm Ventures, Jio Platforms এ ৭৩০ কোটি বা ০.১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের মাধ্যমে প্ল্যাটফর্মটির ০.২% শেয়ার কেনার ঘোষণা দেয়।
  • সবশেষে ১৫ই জুলাই, রিলায়েন্সের এজিএমের দিনে, বিশ্ববিখ্যাত কোম্পানি গুগল, Jio Platforms এর ৭.৭% শেয়ার কিনে নেয়ার ঘোষণা দেয়, যার মূল্য ৩৩,৭৩৭ কোটি রুপি বা ৪.৪ বিলিয়ন ডলার, যা এই ১৪টি ইনভেস্টমেন্ট ডিলের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এই ঘোষণার একদিন আগে গুগলের প্যারেন্ট কোম্পানি Alphabet এর সিইও মিঃ সুন্দর পিচাই ভারতে আগামী ৫-৭ বছরে ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেন। 
সর্বমোট ৮টি প্রাইভেট ইক্যুইটি ফার্ম ৭.৯ ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিলো Jio Platforms এ, যা যথাক্রমে ফেসবুক ও গুগলের বিনিয়োগের ৪০% ও ৮০%  বেশি।

Source: NDTV

Products & Services from the Investments
  • Jio-Facebook: গত বছরের ডিসেম্বরে Jio তাদের অনলাইন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম JioMart এর কার্যক্রম সীমিত আকারে শুরু করে। আর Facebook এর পক্ষ থেকে বিনিয়োগের ঘোষণা আসার দিন দুয়েক পরে অনলাইনে আত্নপ্রকাশ করে JioMart। Jio-তে Facebook এর ইনভেস্টমেন্ট ভারতের ই-কমার্স ব্যবসায় সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্টটির অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিলো। FlipKart ভারতীয় ই-কমার্স সেক্টরের ৬০% শেয়ার দখলে রাখলেও Walmart এর মালিকানা থাকার কারণে রেগুলেটরি বিধিনিষেধের মুখে পড়েছে। এক্ষেত্রে দেশী কোম্পানি হওয়ার সুবাদে Jio সরকারী আনুগত্যের কারণে তুলনামূলক অনুকূল পরিবেশ পাবে। 
  • Jio-Google: ভারতের বিপুল পরিমাণ গরীব জনগোষ্ঠীর কাছে স্বল্প দামের স্মার্টফোন পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে Jio তে বিনিয়োগ করার ঘোষণা দেয় Google। এর আগে কোম্পানিটি "Google For India" নামের একটি Digitization Fund এর মাধ্যমে ভারতে ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়। Jio তে বিনিয়োগের অপেক্ষায় থাকা ৪.৫ বিলিয়ন ডলার সেই ফান্ডেরই একটা অংশ। Jio-এর প্রায় ৪০ কোটি টেলিকম সার্ভিস সাবস্ক্রাইবারদের কাছে এফোর্ডেবল স্মার্টফোন পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমে দ্রুত স্মার্টফোনের বাজার দখল করাই গুগলের লক্ষ্য।
  • Jio-Silver Lake: US-ভিত্তিক প্রাইভেট ইক্যুইটি কোম্পানি Silver Lake টেকনোলজি সেক্টরে বিনিয়োগের জন্য বিখ্যাত। সর্বশেষ আপডেটেড তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানিটির Asset Under Management (AUM) প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার। Twitter, Alibaba, Ant Financial, Dell সহ আরো কিছু লিডিং টেক কোম্পানিতে ইনভেস্ট করেছে Silver Lake। এসব ইনভেস্টমেন্ট থেকে বছরে ২০৪ বিলিয়ন ডলারের মত আয় হয় Silver Lake এর। ২০০৯ সালে ebay এর কাছ থেকে ১.৯ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে Skype-কে কিনে ২০১১ সালে Microsoft এর কাছে ৮.৫ বিলিয়ন ডলারে বিক্রি করার মাধ্যমে প্রাইভেট ইক্যুইটি ইনভেস্টমেন্টের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সফল exit deal সম্পন্ন করার রেকর্ড নিজের কাছে রেখেছে Silver Lake। ২০১৩ সালে ভারতে প্রথম বিনিয়োগ করে কোম্পানিটি। Jio Platforms-এ সর্বমোট ১০২০২.৫৫ কোটি রুপি বিনিয়োগ করেছে Silver Lake, যা প্ল্যাটফর্মটির ২.০৮% শেয়ারের সমতুল্য।
  • Jio-KKR: ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত নিউইয়র্কভিত্তিক প্রাইভেট ইক্যুইটি ফার্ম KKR এখন পর্যন্ত ২০টিরও বেশি টেক কোম্পানিতে ৩০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে আছে BMC Software, TikTok এর প্যারেন্ট কোম্পানি ByteDance, Gojek ইত্যাদি। Jio-এর সাথে deal এশিয়া মহাদেশে KKR এর সবচেয়ে বড় ইনভেস্টমেন্ট।
  • Jio-General Atlantic: অপর নিউইয়র্কভিত্তিক প্রাইভেট ইক্যুইটি ফার্ম General Atlantic-এর ইনভেস্টমেন্ট পোর্টফোলিওতে হেলথকেয়ার, ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস এবং টেকনলজি সেক্টরের বিভিন্ন কোম্পানি আছে। Uber, Airbnb, Alibaba, ANT Financial, ByteDance, Box, Snapchat এবং Facebook এর মত কোম্পানিতে ইনভেস্ট করেছে ফার্মটি। Jio ছাড়াও ভারতে আগেও ইনভেস্ট করেছে General Atlantic। বেঙ্গালুরোভিত্তিক অ্যাপার্টমেন্ট রেন্টিং স্টার্টআপ NoBroker, Education Tech বা Edtech কোম্পানি Unacademy ও Byju's, পেমেন্ট প্রসেসর কোম্পানি Billdesk এবং National Stock Exchange of India (NSE) রয়েছে General Atlantic এর পোর্টফোলিওতে।
  • Jio-Qualcomm: 5G infrastructure প্রতিষ্ঠা এবং সার্ভিস প্রদান সংক্রান্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে Qualcomm Ventures এর কাছে শেয়ার বিক্রি করেছে Jio। এতে করে Jio 5G Technology rollout করতে Qualcomm Inc. এর পূর্ণ সাপোর্ট পাবে।
  • Jio-Intel: 5G technology rollout এর ক্ষেত্রে Intel থেকেও সাপোর্ট পাবে Jio। এছাড়াও Jio এর  বিভিন্ন প্রোডাক্ট ও সার্ভিসে Artificial Intelligence (AI), Internet of Things (IoT) - এর প্রয়োগের ক্ষেত্রেও Intel কাজ করবে। ভবিষ্যতে ল্যাপটপ ও ট্যাবলেট বিক্রির পরিকল্পনাও আছে Jioর; যার জন্য Intel এর সাথে যৌথভাবে কাজ করবে কোম্পানিটি।
  • Jio-Vista: Vista এর ইনভেস্টমেন্টের মাধ্যমে নিজেদের প্ল্যাটফর্ম, প্রোডাক্ট ও সার্ভিসে AI, IoT, Blockchain, Augmented Reality (AR)/Virtual Reality (VR)-সহ বিভিন্ন উন্নত প্রযুক্তি প্রয়োগের সুযোগ পাবে Jio।
Behind the Mania
কেন মাত্র ৩ মাসের মধ্যে এতগুলো বড় বিনিয়োগ হল? Jio-ই বা কেন নিজেদের প্ল্যাটফর্মের প্রায় এক তৃতীয়াংশ শেয়ার বিক্রি করে দিলো? চলুন পিছনের কারণগুলি দেখা যাক - 

১) বেশ কিছু কারণে ইনভেস্টরদের বিশেষ করে প্রাইভেট ইক্যুইটি ইনভেস্টরদের White list-এ আগে থেকেই ছিল Jio; আর সেগুলো হল - ১৩০ কোটি জনসংখ্যার বাজারে Jio-র আধিপত্য, লোনমুক্ত পোর্টফোলিও এবং রেগুলেটরি দিক থেকে নিরাপদ অবস্থান। সেই সাথে গত বছর Jio Platforms এর অপারেশন শুরু করা ছিল Jio-র মাস্টারস্ট্রোকগুলোর মধ্যে একটি। এছাড়াও করোনাভাইরাসের কারণে অনলাইন ও টেকনোলজি-ভিত্তিক ব্যবসাগুলোতে দ্রুত কাস্টমার বাড়াতে সক্ষম হয়েছে Jio। এসব কারণে Jio বেশ কয়েকটি বড় কোম্পানির বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে।

২) Jio এখন আর শুধুমাত্র একটি মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর না, প্রায় সব ধরণের ডিজিটাল বিজনেসে প্রবেশ করা একটি পরিপূর্ণ টেক কোম্পানি। আর এইসব কারণে Jio Platforms ইনভেস্টরদের কাছ থেকে higher valuation পেয়েছে। প্রাইভেট ইক্যুইটি কোম্পানিগুলো প্ল্যাটফর্মটিকে তার ইক্যুইটির জন্য প্রায় ৪.৯ ট্রিলিয়ন রূপি ভ্যালুয়েশন দিচ্ছে, Facebook ও Google দিচ্ছে ৪.৪ ট্রিলিয়ন রূপি।

৩) টেলিকম ব্যবসাসহ আরো অন্যান্য ব্যবসাসমূহ খুব অল্প সময়ের মধ্যে শুরু করার দরুন রিলায়েন্সের লোনবুক দিনদিন বড় হয়েছে। ডিজিটাল বিজনেসের জন্য লোনবিহীন আলাদা Entity প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে বড় রকমের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা এবং তা দিয়ে রিলায়েন্সের লোনবুক ছোট করাই ছিলো Jio Platforms বানানোর উদ্দেশ্য।


সাবসিডিয়ারি হওয়ার কারণে Reliance Jio-থেকে ১ লাখ কোটি রুপির লোন রিলায়েন্সের ঘাড়ে আসে, কিন্তু সেই সাথে সমপরিমাণ ক্যাশও আসে রিলায়েন্সের কাছে। এই ক্যাশের উৎস কি? এর আগে Jio Platforms, Reliance Jio এর ইস্যু করা Preferred Shares সাবস্ক্রাইব করে; আর তা থেকে প্রাপ্ত ক্যাশই প্যারেন্ট কোম্পানিতে ট্রান্সফার করে Jio। এখন প্রশ্ন হল এই শেয়ার সাবস্ক্রাইব করার জন্য টাকা কোত্থেকে পেল Jio Platforms। এই টাকা পেয়েছে প্যারেন্ট কোম্পানি রিলায়েন্সের কাছ থেকেই। কি, মাথা ঘুরছে?
গত বছরের শুরুর দিকে Jio Platforms-ও Reliance Jio-র মত একই পদ্ধতিতে Preferred Shares ইস্যু করে এবং সেগুলো সাবস্ক্রাইব করে রিলায়েন্স। ঘুরে ফিরে কি দাঁড়াচ্ছে? রিলায়েন্স তার নিজের ক্যাশ ব্যবহার করেছে Jio Platforms এ ফাইনান্সিংয়ের জন্য; সেই ক্যাশ Jio Platforms ব্যবহার করেছে টেলিকম সাবসিডিয়ারি Reliance Jio তে ফাইনান্সিংয়ের জন্য; এই অর্থ আল্টিমেটলি Jio, প্যারেন্ট কোম্পানি রিলায়েন্সকেই ফেরত দিয়েছে। এভাবে রিলায়েন্স তার টেলিকম সাবসিডিয়ারি কাছে থেকে লোনের সাথে নিজের ক্যাশও ফেরত পেয়েছে। গত ৩ মাসে যতগুলি Deal হয়েছে, প্রতিটি ইনভেস্টমেন্ট থেকে প্রাপ্ত অর্থের কিছু অংশ Jio Platforms নিজের কাছে রাখবে, বাকিটা দিয়ে রিলায়েন্সের লোন পরিশোধ করা হবে।


৪) আমেরিকা-চীন বাণিজ্য যুদ্ধ এবং ভারত-চীন এর মধ্যে সাম্প্রতিক সীমান্ত সংঘর্ষের সূত্র ধরে ইন্ডিয়ান কোম্পানিগুলোর মধ্যে Data Sovereignty নিয়ে কনসার্ন বেশ জোরদার হচ্ছে। টেলিকম ও ডিজিটাল পেমেন্ট-সহ আরো বিভিন্ন সেক্টরের জায়ান্টদের কাছে বিপুল সংখ্যক ডাটা রয়েছে। চীন আমেরিকার মত উন্নত দেশগুলোর বিভিন্ন কোম্পানির কাছে যাতে ভারতীয় ডাটার অবাধ একসেস না থাকে, সেজন্য প্রোটেকশনিস্ট আইন করা নিয়েও ব্যাপক সোচ্চার সেক্টর জায়ান্টরা। আর এইসব কারণে Google, Facebook, Amazon, Microsoft এর মত US টেক জায়ান্টরা ভারতে তাদের কার্যক্রম চালাতে বিভিন্ন রেগুলেটরি বিধিনিষেধের সম্মুখীন হচ্ছে। Jio তে Facebook, Google এর ইনভেস্টমেন্টকে তাই ভারতে বিদেশী কোম্পানিগুলোর কার্যক্রমের ব্যাপারে রেগুলেটরি বিধিনিষেধের ব্যাপারে কিছুটা হলেও শৈথিল্য পাওয়া এবং ভারতীয় ডাটার একসেস পাওয়ার রাস্তা ভাবলেও ভুল হবেনা।

বিশ্বজনীন না হলেও অন্তত ভারতের টেকনোলজি-ভিত্তিক কোম্পানিগুলোর কিভাবে ব্যবসা করা উচিত তা শিখাচ্ছে রিলায়েন্স। পরবর্তীতে বিশ্বের টেক কোম্পানিগুলোও হয়ত রিলায়েন্সের দেখানো পথেই হাঁটবে।

No comments:

Post a Comment