Advanced Chemical Industries Ltd. বা ACI Ltd. (এসিআই লিমিটেড) বাংলাদেশের বড় conglomerate-গুলোর মধ্যে একটি। হেলথকেয়ার, কনজ্যুমার গুডস ও ইলেকট্রনিক্স, কৃষি এবং রিটেইল এই চারটি খাতে মোট ৩৯ ধরণের পণ্য বিক্রি করে এসিআই। ১৫ বিলিয়ন টাকা মার্কেট ভ্যালু এবং ৬৩ বিলিয়ন টাকা রেভিনিউ জেনারেটিং conglomerate-টির সাবসিডিয়ারি কোম্পানি আছে ১৪টি, জয়েন্ট ভেঞ্চার এবং এসোসিয়েট কোম্পানি আছে ৪টি এবং ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্ট আছে ১২টি। এতগুলো ব্যবসায় অন্তর্ভুক্ত থাকার পরও আগের বছরগুলোতে এসিআইয়ের প্রফিট জেনারেশনে ধারাবাহিকতার অভাব ছিলো। তার উপর গত বছর অর্থাৎ ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে এসিআই প্রায় ৯০ কোটি টাকা লোকসান করে। এসিআইয়ের ইতিহাস, বিভিন্ন বিজনেস ইউনিট এবং কোম্পানিটির রেভিনিউ জেনারেশন ও প্রফিটেবিলিটির অবস্থা নিয়ে আলোচনা করবো আজকের ভিডিওতে।
History
১৯২৬ সালে চারটি ব্রিটিশ কেমিক্যাল কোম্পানির মার্জারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় Imperial Chemical Industries বা ICI। কোম্পানিগুলো হল - Brunner Mond, Nobel Explosives, The United Alkali Company এবং British Dyestuffs Corporation। ইম্পেরিয়াল কেমিকেলের প্রোডাক্টের মধ্যে ছিল বিভিন্ন ধরণের কেমিক্যাল, বিস্ফোরক, কীটনাশক, পেইন্ট এবং রেজিন (রজন)। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি হিসেবে আরো বেশ কয়েকটি দেশে অপারেট করছিল ICI। তারই ধারাবাহিকতায় ভারতীয় উপমহাদেশে কোম্পানিটি ICI (India) Ltd. নামের একটি সাবসিডিয়ারির মাধ্যমে ব্যবসা করা শুরু করে । ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান আলাদা হওয়ার পর ICI (India) এর করাচি অফিসের নাম পরিবর্তন করে ICI (Pakistan) Ltd. রাখা হয়। পরে ১৯৬৮ সালে কোম্পানিটি স্থান পরিবর্তন করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আসে। পরবর্তীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর এই ICI (Pakistan)-ই ১৯৭৩ সালে ICI Bangladesh Manufactures Ltd. নামে বাংলাদেশে অপারেশন শুরু করে। ১৯৭৬ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে অন্তর্ভুক্ত হয় কোম্পানিটি। পরবর্তীতে ১৯৯২ সালের ৫ই মে মূল কোম্পানি ICI Plc. তার ৭০% শেয়ার লোকাল শেয়ারহোল্ডারদের কাছে বিক্রি করে। আর এই ডাইভেস্টমেন্টের পরেই ICI Bangladesh, ACI নামে আত্মপ্রকাশের মাধ্যমে বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করে।
Business Expansion
মোট চারটি Strategic Business Unit (SBU)-এ ব্যবসা করছে এসিআই। সেগুলো হল - ১) Health Care ২) Consumer Brands ৩) Agribusinesses এবং ৪) Retail Chain। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রধানত ফার্মাসিউটিক্যালস ও পেস্ট কন্ট্রোল পণ্যের ব্যবসাতে অন্তর্ভুক্ত থাকলেও পরবর্তীতে একের পর এক সাবসিডিয়ারি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিভিন্ন সেগমেন্টে প্রবেশ করে এসিআই।
এসিআই দেশীয় ফার্মাসিউটিক্যাল মার্কেটে প্রায় ত্রিশ বছর ধরে ব্যবসা করছে। এই ইন্ডাস্ট্রিতে এসিআইয়ের মার্কেট শেয়ার ৪%। এখন পর্যন্ত ১০০টির বেশি therapeutic class এ ২৫০টিরও বেশি মলিকিউল বাজারে এনেছে এসিআই। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩৩টি নতুন মলিকিউল বাজারে আনে কোম্পানিটি। দেশের চাহিদা মিটিয়ে ৪টি মহাদেশের ৩০টি দেশে ঔষুধ রপ্তানিও করছে এসিআই। এছাড়াও আফ্রিকা ও মধ্য আমেরিকাতে ১৫টিরও বেশি দেশে ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য রেগুলেটরী কার্যক্রম চলছে।
পেস্ট এবং নন-পেস্ট কন্ট্রোল এই দুই ধরণের প্রোডাক্টের মাধ্যমে হোম কেয়ার সেগমেন্টে উপস্থিতি রয়েছে এসিআইয়ের। সেই সঙ্গে আমেরিকান কনজিউমার ব্র্যান্ড SC Johnson এর ম্যানুফ্যাকচারিং ও
ডিস্ট্রিবিউশন পার্টনার হয়ে বিভিন্ন পণ্য বাজারজাত করছে এসিআই। এরোসল মার্কেটে ACI Aerosol কাস্টমারদের নাম্বার ওয়ান চয়েস। Neilson এর
তথ্যমতে, এরোসল
মার্কেটে ৯৪% এর বেশি মার্কেট শেয়ার ACI Aerosol এর। মসকুইটো কয়েল
মার্কেটে এসিআই কয়েলের শেয়ার প্রায় ৮%। এই মার্কেটে অন্য নন-ব্র্যান্ডেড
প্রোডাক্টের আধিক্যের কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এসিআইয়ের মার্কেট শেয়ার
কমেছে। নন-পেস্ট কন্ট্রোল প্রোডাক্টের মধ্যে Angelic Air Freshner এবং টয়লেট ক্লিনার হিসেবে Vanish ব্র্যান্ডের পণ্য বাজারজাত করেছে এসিআই।
চার দশকের বেশি সময় ধরে স্যাভলন ব্র্যান্ডের বিভিন্ন পণ্য বাংলাদেশে আছে। মূল কোম্পানি ইম্পেরিয়াল কেমিক্যালের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ১৯৯২ সাল থেকে এসিআইয়ের অধীনে চলে আসে ব্র্যান্ডটি। শুরুতে এই পণ্যের ব্র্যান্ডের তালিকায় শুধুমাত্র এন্টিসেপ্টিক লিকুইড ও ক্রিম থাকলেও ১৯৯৮ সালে হ্যান্ডওয়াশ অন্তর্ভুক্ত হয়। পরবর্তীতে এসিআইয়ের টয়লেট্রিজ
বিজনেসের অধীনে স্যাভলনের সাবান, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, এবং ওয়াইপ্স সহ আরো বিভিন্ন পণ্য অন্তর্ভুক্ত হয়। এন্টিসেপটিক ইন্ডাস্ট্রিতে স্যাভলনের এন্টিসেপটিক পণ্যের মার্কেট শেয়ার ৮৪% এর বেশি। করোনাভাইরাসের প্রকোপে
এসিআইয়ের টয়লেট্রিজ বিজনেসে স্পেশালি সাবান, হ্যান্ড ওয়াশ, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ইত্যাদি পণ্য বিক্রি অনেকগুণে বেড়েছে।
২০০০ সালে Creative Communication Ltd. নামের সাবসিডিয়ারি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মিডিয়া এন্ড কমিউনিকেশন্স ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশ করে এসিআই। মিডিয়া প্ল্যানিং, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টসহ আরো বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করছে Creative Communication। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কোম্পানিটির আয় ছিল ৭.৫ কোটি টাকা এবং প্রফিট ছিল ১ কোটি টাকা।
২০০৩ সালে এসিআই ও টাটা গ্লোবাল বেভারেজ ওভারসীজ হোল্ডিংস লিমিটেড এর
জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি Tetley ACI Bangladesh-এর মাধ্যমে চা উৎপাদন, প্যাকেজিং ও বিক্রি শুরু করে এসিআই। এই কোম্পানির দুটি প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ড টাটা টি, ও টেটলি।
২০০৪ সালে ACI Salt Ltd. - এর মাধ্যমে এডিবল সল্ট মার্কেটে ব্যবসা শুরু করে এসিআই। বিগত দশকে ৮ বার সল্ট মার্কেটে শীর্ষ ব্র্যান্ডের জায়গা ধরে রেখেছে এসিআই সল্ট। বাজারে BSTI এর অনুমোদনহীন, বাইরে থেকে আমদানি করা নিম্নমানের লবণ বিক্রেতার আধিক্যের কারণে এসিআই, মোল্লা, কনফিডেন্সসহ দেশীয় কোম্পানিগুলো বেশ কয়েকবছর ধরে ব্যাপক প্রতিযোগিতার মধ্যে ব্যবসা করে আসছে। এই প্রতিযোগিতার মধ্যেও এসিআই সল্ট গুণগতমানের দিক থেকে এখনো সবার শীর্ষে অবস্থান করছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কোম্পানিটির আয় ছিল ১৯০ কোটি টাকা এবং প্রফিট ছিল ৯ কোটি টাকা।
একই বছর (২০০৪ সালে) এসিআই ভারতের গোদরেজ এগ্রোভেট-এর সাথে আরেকটি জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি, ACI Godrej Agrovet Pvt. Ltd প্রতিষ্ঠা করে যার মাধ্যমে কোম্পানিটি সব ধরণের এনিমেল ফিড (পোলট্রি, একুয়া, ক্যাটল ফিড) ও একদিনের মুরগীর বাচ্চা উৎপাদন ও বিক্রয়ের সাথে সংযুক্ত হয়।
এসিআই সিড বিজনেস শুরু করে ২০০৬ সালে। Bangladesh Rural Development Academy, Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman Agricultural University (BSMRAU), ও Bangladesh Agricultural University-তে এসিআইয়ের রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট স্টেশন রয়েছে। এসিআই সীড USAID, IRRI, IFC, KATALYST সহ বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানীর সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করছে। নতুন প্রজাতির বোরো চাল, হাইব্রিড চাল, ভুট্টা ইত্যাদি বাজারে আনার মাধ্যমে সমগ্র সীড মার্কেটের ৭০% এর বেশি শেয়ার দখল করতে সক্ষম হয়েছে এসিআই।
২০০৮ সাল এসিআইয়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর। এ বছর বেশ কিছু নতুন ব্যবসার সাথে যুক্ত হয় এসিআই। এই বছর সারফেস কেয়ার ক্যাটাগরিতে প্রবেশ করে এসিআই যেখানে বর্তমানে গ্লাস, ফ্লোর ক্লিনার হিসেবে Shinex ব্র্যান্ডের পণ্য বাজারে রয়েছে। Female Hygiene ক্যাটাগরিতে Savlon Freedom Sanitary Napkin launch করা হয় এই বছর। বর্তমানে স্যানিটারি ন্যাপকিন ইন্ডাস্ট্রিতে এর মার্কেট শেয়ার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এছাড়াও গত অর্থবছর অর্থাৎ ২০১৮-১৯ এ Female Hygiene ও Baby Care সেগমেন্টে ৯৫% প্রবৃদ্ধি অর্জন করে এসিআই।
২০০৮ সালেই ফুড বিজনেসে প্রবেশ করে এসিআই। ACI Pure Flour Ltd (ACFL) নামের সাবসিডিয়ারি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে PURE
ব্র্যান্ডের আটা, ময়দা, সুজি, ব্রাউন আটা, মাল্টিগ্রেইন আটা
ইত্যাদি বাজারজাত করা হয়। এর মধ্যেই ৩০% এর বেশি মার্কেট শেয়ার নিয়ে মার্কেটে শক্ত
অবস্থান করে নিয়েছে ACI Pure Flour Ltd। অন্যদিকে ACI Foods Ltd নামের আরেকটি সাবসিডিয়ারির মাধ্যমে PURE এবং FUN ব্র্যান্ডের অধীনে বেসিক স্পাইস, মিক্সড স্পাইস, ন্যুডলস, এরোমেটিক রাইস, কেক, চানাচুর, ক্যান্ডি, চাটনি ইত্যাদি পণ্য মার্কেটে এনেছে এসিআই।
২০০৮ সালে সুপারস্টোর হিসেবে এসিআই লজিস্টিক্সের অধীনে যাত্রা শুরু করে স্বপ্ন। বাংলাদেশের প্রধান শহরগুলো যেমন ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে ১৩০টি আউটলেটের মাধ্যমে ব্যবসা করছে যার মধ্যে ৬১টি তার নিজের, এবং বাকিগুলো ফ্র্যাঞ্জাইজিস্টোর। রিটেল চেইন মার্কেটের প্রায় ৫০% মার্কেট শেয়ার নিয়ে শীর্ষে আছে স্বপ্ন। ২০১৭ সালে স্বপ্ন shwapno.com এর মাধ্যমে ই-কমার্স মার্কেটেও প্রবেশ করেছে। এছাড়াও বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্র সম্প্রসারণে GLOBAL G.A.P এর সাথে কাজ করে চলেছে এসিআই লজিস্টিক্স ।
সুপারস্টোর হিসেবে আগোরা, মীনাবাজারের পরে আসলেও স্বপ্ন খুব দ্রুত মার্কেট শেয়ার ধরতে সক্ষম হয়। তবে শুরুতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয় স্বপ্নকে। অন্যান্য সুপার শপগুলোর মত শুরুতে স্বপ্নেরও টার্গেট ছিল দেশের এফ্লুয়েন্ট ক্লাসের লোকজন। সেই কারণে শুরু থেকেই আগোরা ও মীনা বাজারের কাছে প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয় স্বপ্ন। সেই সাথে হাইজিন মেইনটেইনেন্স, বিভিন্ন পণ্যের সহজলভ্যতার ব্যাপারেও ক্রেতাদের বেশ অভিযোগ ছিল। এসব কারণে ঐ সময় স্বপ্নের রিটেইল আউটলেটের সংখ্যাও কমতে থাকে।
পরবর্তীতে বেশ কিছু সময়েপোযোগী পদক্ষেপের মাধ্যমে
ঘুরে দাঁড়ায় স্বপ্ন। পণ্যের দাম কমানো, প্রোডাক্ট পোর্টফোলিও বাড়ানো সহ
সব শ্রেণীর ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার টার্গেট নিয়ে আগাতে থাকে সুপারশপটি। এছাড়াও পরবর্তীতে Seed to Shelf
নীতির মাধ্যমে কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দিতে সরাসরি
এগ্রোলিংক্স ও লজিস্টিক্স একসাথে কাজ শুরু করে। সুপার শপ চেইন মার্কেটের প্রায়
অধের্ক দখল করে রাখলেও প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে কোন বছরই লাভের মুখ দেখেনি
স্বপ্ন। এজন্য কোম্পানির এড ও মার্কেটিং বিভাগে বেশি খরচ করা, বড় রকমের লোন নেয়ার কারণে লোন বা
ইন্টরেস্ট এক্সপেন্স বেশি হওয়াকে কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে। ভবিষ্যতে লোনের মাধ্যমে ফাইনান্সিংয়ের উপর নির্ভরতা কমিয়ে ইক্যুইটি
ফাইনান্সিংয়ের উপর জোর দেয়ার কথা চিন্তা করছে কোম্পানিটি।
Surface Care, Hygiene, Supermarket এবং Food ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশের বছরেই ইলেক্ট্রনিক্স মার্কেট ও প্যাকেজিং বিজনেসে প্রবেশ করে এসিআই। এই বছরই এসিআই বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ড Panasonic-এর টিভি, রেফ্রিজারেটর, এয়ার কন্ডিশনার ইত্যাদি পণ্যের অফিসিয়াল ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে এই সেগমেন্টে নিজেদের ব্র্যান্ড "Sparkle" এর এয়ার কন্ডিশনার বাজারজাত করা হয়। এই বছরের শেষ দিকে Premiaflex Plastics Ltd. নামের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ফ্লেক্সিবল প্যাকেজিং, কনজুমার প্লাস্টিকসহ অন্যান্য প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুত ও বাজারজাতকরণ শুরু করে এসিআই।
২০১২ সালে এডিবল অয়েল মার্কেটে প্রবেশ করে এসিআই। ঐ বছরই ACI Nutrilife Rice Bran Oil বাজারে আসে। ২৫% এর বেশী মার্কেট শেয়ার অর্জন করে রাইস ব্র্যান অয়েল মার্কেটে ভাল অবস্থান আছে নিউট্রিলাইফের। এক্ষেত্রে বলে রাখি, রাইস ব্র্যান অয়েল, ধানের বাইরের স্তর থেকে সংগ্রহীত, উচ্চ তাপমাত্রার রান্না এবং ডিপ-ফ্রাইংয়ের জন্য উপযোগী তেল যাতে ফ্যাটি এসিড ও ভিটামিন-ই এর আধিক্য রয়েছে। ২০১৬ সালে নিজেদের আরেকটি ব্র্যান্ড PURE-এর সয়াবিন অয়েল বাজারে আনে এসিআই। এছাড়াও আমদানিকৃত ব্র্যান্ড Le Blanc Premium Sunflower Oil এর মাধ্যমেও ব্যবসা করছে সাবসিডিয়ারি কোম্পানি ACI Edible Oils Ltd.। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কোম্পানিটির আয় ছিল ৭৭ কোটি টাকা এবং প্রফিট ছিল ১ কোটি টাকা।
২০১৩ সালে Neem Laboratories Pvt. Ltd. অ্যাকুয়ার করার মাধ্যমে হারবাল পণ্য বিক্রি শুরু করে এসিআই। সেই সাথে দেশীয় পেইন্ট মার্কেটে যাত্রা শুরু করে কোম্পানিটি। পেইন্ট বিজনেস শুরু করার পর ডেকোরেটিভ পেইন্ট, প্রোটেক্টিভ, মেরিন ও পাউডার কোটিং, ইত্যাদি সেগমেন্টে বিশ্বখ্যাত পেইন্ট ও কোটিং কোম্পানি Akzonobel এর বিভিন্ন ব্র্যান্ড যেমন International, Dulux, Interpon, Duwel-এর পণ্য বাজারে এনেছে এসিআই। তবে মোট বিদেশী-দেশী আরো ৪৪টি প্লেয়ার মার্কেটে থাকার কারণে বাংলাদেশে পেইন্ট ইন্ডাস্ট্রিতে খুব কম মার্কেট শেয়ার এসিআই পেইন্টস-এর।
ঐ বছরের শুরুর দিকে US সহ অন্যান্য রেগুলেটেড ফার্মাসিউটিক্যাল মার্কেটে ব্যবসা করার জন্য ACI HealthCare Ltd. নামের একটি সাবসিডিয়ারি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করা হয়। নারায়ণগঞ্জে কোম্পানিটির একটি ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্ট রয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কোম্পানিটি প্রায় ৩০০ কোটি টাকা আয় করলেও ৩৫ কোটি টাকা লসের মুখ দেখেছে।
২০১৪ সালে Men's grooming এবং ২০১৫ সালে IT এবং মোবাইল ফোন মার্কেটে প্রবেশ করে এসিআই। যদিও এসব বিজনেসে খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থানে নেই কোম্পানিটি।
২০১৬ সালে জাপানীজ ব্র্যান্ড Yamaha-এর মোটরসাইকেলের ডিলারশীপ অর্জন করার মাধ্যমে বাইক বিজনেস শুরু করে এসিআইয়ের সাবসিডিয়ারি কোম্পানি ACI Motors। ১৫০ সিসি সেগমেন্টের বাইক বিক্রিতে এসিআইয়ের আয় সবচেয়ে বেশি। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে এই সেগমেন্টের বাইক বিক্রিতে ৩৩% প্রবৃদ্ধি এসেছে। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম এন্টি-লক ব্রেকিং সিস্টেম সম্বলিত বাইক বাজারে আনে এসিআই। ২০১৯ সালের মে মাসে এসিআই মটরস লোয়ার সেগমেন্ট অর্থাৎ ১২৫ সিসি এবং তার নিচের সেগমেন্টগুলোয় Original Equipment Manufacturer (OEM) হিসেবে প্রবেশ করার ঘোষণা দেয় এবং Completely Built Unit বা CBU বাইক বিক্রির পাশাপাশি Completely Knocked Down (CKD) বাইক বিক্রয় শুরু করে। এই উদ্দেশ্যে ACI Motors, Yamaha Motors Company ও Yamaha Motor India Sales এর সাথে যুক্ত হয়ে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাইক ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্টও প্রতিষ্ঠা করেছে।
গত ৮ বছরের বেশি সময় ধরে লোকাল বাইক ম্যানুফাকচারাররা ভ্যাট, শুল্ক, ও ট্যাক্স রেটের ক্ষেত্রে সুবিধা পেয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ইয়ামাহার মত বিদেশী বাইক ম্যানুফাকচারাররা বাংলাদেশে ফ্যাক্টরি নির্মাণের মাধ্যমে বাইক ম্যানুফাকচারিংয়ে উৎসাহিত হয়েছে। বেশ কয়েক বছর ধরে বেশিদামের হাইয়ার সেগমেন্টে ব্যবসা করলেও ১২৫ সিসি ও তার নিচের সেগমেন্টে প্রবেশ করছে এসিআই মটরস। ১২৫ সিসি সেগমেন্টে ACI Motors বাজারে এনেছে Yamaha Saluto Disc Brake মূল্য ১২০,০০০ টাকা। এত কম দামে ইয়ামাহার বাইক এর আগে বাংলাদেশে আসেনি। যেটি ইয়াং জেনারেশনের বাইকপ্রেমীদের একটি সুখবর।
ACI Motors এর উল্লেখযোগ্য ব্র্যান্ডের বাইক বললে FAZER FI, YZF R15 and FZS FI এর কথা বলতে হয়। এছাড়াও ঢাকা বাইক কার্নিভাল, বাইক ফিয়েস্টা ও সবচেয়ে বড় বাইক লোগো বানিয়ে গিনেজ বুকে নাম উঠানোসহ ইত্যাদি ইভেন্টের মাধ্যমে দেশীয় বাইক মার্কেটে বিশেষ করে ১৫০ সিসি এবং হাইয়ার সেগমেন্টে বড় মার্কেট শেয়ার অর্জনে এগিয়ে আছে এসিআই।
গত তিন বছরে ACI Motors ১৯% প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এই কোম্পানির অধীনে আরেকটি Strategic Business Unit হচ্ছে - Farm Mechanization। এই সেগমেন্টে "সোনালিকা" ব্র্যান্ডের ট্রাক্টর প্রধান পণ্য। এছাড়াও এই সেগমেন্টের প্রোডাক্ট পোর্টফোলিওতে ডিজেল ইঞ্জিন, রিপার, রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টার, ওয়াটার পাম্প, মিনি কম্বাইন্ড হারভেস্টার ইত্যাদি আছে।
Agri-Machineries ছাড়াও কৃষিক্ষেত্রে আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এসিআই। ACI Agrolinks Ltd. নামের সাবসিডিয়ারি কোম্পানির মাধ্যমে কৃষকদের জন্য ফরোয়ার্ড ও ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ তৈরি করা, এবং তাদের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি মার্কেটে আনার মাধ্যমে ফরোয়ার্ড ফুড মার্কেট পয়েন্ট তৈরি হচ্ছে। এক্ষেত্রে এফিশিয়েন্ট ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেল প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে সেইফ ফুড সেক্টরে প্রবেশ করাই এগ্রোলিংকস-এর লক্ষ্য। ইতোমধ্যেই মোহাম্মদপুরে "Fisharbour" নামে একটি ফরোয়ার্ড মার্কেট তৈরি করা হয়েছে যার মাধ্যমে হাইজেনিক মাছ বিক্রি হবে। এছাড়া এগ্রোলিংকসের মাধ্যমে চীন, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম ইত্যাদি দেশে পণ্য রপ্তানিও হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন কৃষিপণ্য কৃষক ও প্রান্তিক ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করার সুযোগ ও তৈরি করা হচ্ছে।
Animal Health সেগমেন্টে Poultry, Cattle, Vaccine ও Aqua ইত্যাদি পণ্যের ব্যবসা করছে এসিআই।
পশু স্বাস্থ্যের জন্য দরকারী ভ্যাক্সিনের কাঁচামাল আমদানি বাধাগ্রস্ত
হওয়ায় গত বছর এই সেগমেন্টে প্রবৃদ্ধি কমেছে ৩৫%। এছাড়াও সরকারের পক্ষ থেকে নতুন আরোপিত বিধিনিষেধের কারণে একুয়া সেগমেন্টের প্রবৃদ্ধি কমেছে ১৪%।
ক্রপ
কেয়ার সেগমেন্টেও উপস্থিতি রয়েছে এসিআইয়ের। এই সেগমেন্টে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ১০% এর অধিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে
সক্ষম হয়েছে এসিআই। কিন্তু বিগত অর্থবছরে অর্থাৎ
২০১৮-২০১৯ এ এই সেগমেন্টে আয় কমেছে ৭%। ফসলের কম দামের কারণে দেশীয় সার শিল্প
ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার প্রভাব পড়েছে এসিআইয়ের উপর। তবে এই সেগমেন্টের "রত্ন"
ব্র্যান্ডের সার বাজারজাত করে সারের মার্কেটের ২০% শেয়ার ধরতে সক্ষম হয়েছে
এসিআই। এছাড়াও বৈচিত্র্য আনতে এসিআই রেডি মিক্স সয়েল বাজারে এনেছে কোম্পানিটি।
এছাড়াও ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস সেগমেন্টে বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ড কোলগেট-এর পণ্য বিক্রিতে প্রায় প্রতি বছরই ১১% এর বেশি প্রবৃদ্ধি থাকে। শিকাগোভিত্তিক কোম্পানি Merisant এর Equal ও Canderel ব্র্যান্ডের সুইটনারের বিক্রিও বেশ ভাল। বৈচিত্র্য আনতে ২০১৮ সালে সম্পূর্ণ নতুন উপাদানসমৃদ্ধ Equal ব্র্যান্ডের আরেকটি সুইটনার Stevia বাজারে আনে এসিআই। একই বছর প্রিমিয়াম প্রোডাক্ট হিসেবে 'ACI Sandal Soap' বাজারে আনে কোম্পানিটি। এসিআই ও ডাবর ইন্ডিয়ার জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি Asian Consumer Care এর মাধ্যমে ডাবরের বিভিন্ন পণ্য বাংলাদেশে বাজারজাত করছে এসিআই। এছাড়াও Laser ব্র্যান্ডের শেভিং পণ্যের মাধ্যমে ম্যানস গ্রুমিং সেগমেন্টে উপস্থিতি ধরে রেখেছে কোম্পানিটি।
Subsidiaries and Brief Financials
এখন এক নজরে দেখে নেয়া যাক এসিআইয়ের সাবসিডিয়ারিগুলোকে -
Subsidiary | Ownership |
ACI Agrolinks | 90% |
ACI Biotech | 80% |
ACI Chemicals | 75% |
ACI Edible Oils | 85% |
ACI Foods | 95% |
ACI Formulations | 54% |
ACI HealthCare | 93% |
ACI Logistics | 76% |
ACI Motors | 67% |
ACI Pure Flour | 95% |
ACI Salt | 78% |
Creative Communication | 60% |
Infolytx Bangladesh | 60% |
Premiaflex Plastics | 87% |
প্রায় প্রতিবছরই নতুন কোন না কোন বিজনেসে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে এসিআই এর রেভিনিউ বাড়লেও ঐসব বিজনেসের রিস্ক এবং ভলাটিলিটি এফেক্ট করেছে কোম্পানির প্রফিটেবিলিটিকে। এর ফলে কোন বছর নীট প্রফিটে বড় গ্রোথ থাকলেও কোন বছরে লসেরও সম্মুখীন হয়েছে কোম্পানিটি। এছাড়াও এসিআইয়ের সব সাবসিডিয়ারি কোম্পানি বা সব বিজনেস সমান লাভজনক না হওয়ায় মূল কোম্পানির প্রফিটে ধারাবাহিকতার বেশ অভাব ছিল। অন্যদিকে অনেক বেশি ব্যাঙ্ক লোননির্ভর হওয়ার কারণে লোনের ইন্টরেস্ট পরিশোধ করতে গিয়ে প্রফিটও বেশ কমে গেছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে। আমাদের পরবর্তী ভিডিওতে এসিআইয়ের সম্মিলিত এবং প্রতিটি সাবসিডিয়ারির প্রফিটেবিলিটি এবং এসিআইয়ের লসের কারণসমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
No comments:
Post a Comment