প্রযুক্তি জগতে ইতোমধ্যে সাড়া ফেলে দিয়েছে সিক্সজি (6G) প্রযুক্তি। না, সিক্সজি এখনো আসেনি, গুটিকয়েক কোম্পানি ফাইভজি (5G) ডেপ্লয়মেন্টের ব্যাপারে প্রাথমিক বা শেষ পর্যায়ে আছে মাত্র। তাহলে সিক্সজি এর কথা বলা হচ্ছে কেন? কারণ বিশ্বের বড় দেশগুলো ইতোমধ্যেই সিক্সজি কাজ শুরু করে দিয়েছে। সিক্সজি ডেপ্লয়মেন্টের সময়সীমাও নির্ধারণ করে ফেলেছে কিছু কোম্পানি। এসব নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে এই লেখায়।
Source: Venturebeat |
Is It coming soon
বিভিন্ন দেশের মোবাইল অপারেটররা এখনো ফাইভজি ডেপ্লয়মেন্ট নিয়ে ব্যস্ত। বাংলাদেশে মাত্র কিছুদিন আগে ফোরজি এলো। সত্যি কথা বলতে, সিক্সজি প্রযুক্তি এখনো গবেষণা পর্যায়ে আছে। Ericsson, Huawei, NTT Docomo- সহ আরো কিছু কোম্পানির মতে এই প্রযুক্তি আসতে এখনো কম করে হলেও ১০ বছর সময় লাগবে। কিন্তু তারপরও বিশ্বের বড় বড় মোবাইল ম্যানুফ্যাকচারাররা ফাইভজি ডেপ্লয়মেন্টের আগেই সিক্সজি এর গ্রাউন্ডওয়ার্ক করে রাখতে চাচ্ছে। এই বিষয়ে স্যামসাং একটি গবেষণাপত্র বা White Paper পাবলিশ করেছে। যেখানে তারা বলেছে, ২০২৮ সালের মধ্যে সিক্সজি ডেপ্লয়মেন্ট সম্ভব।
Timeline of 6G deployment Source: Samsung 6G White Paper |
How fast will 6G be
যেকোন নতুন প্রযুক্তি আসলে সবার প্রথমে যে প্রশ্নটা আসে, কত দ্রুততর হবে এটি। সিক্সজি নিয়ে গবেষণা এখন যে পর্যায়ে রয়েছে, তা থেকে এটি কত দ্রুততর হবে তা বলা কিছুটা মুশকিল। কিন্তু International Telecommunication Union (ITU) কিছুটা আভাস দিয়েছে এই ব্যাপারে। তারা বলছে সেকেন্ডে ১ টেরাবাইট বা ৮,০০০ গিগাবিট পর্যন্ত স্পিড পাওয়া সম্ভব সিক্সজিতে; ফাইভজি-এর ডেটা স্পিডের (প্রতি সেকেন্ডে ২০ গিগাবিট) তুলনায় যেটি ৪০০ গুণ বেশি। অন্যভাবে যদি বলি, ফাইভজি প্রযুক্তি দিয়ে যদি আপনি নেটফ্লিক্স থেকে কয়েক সেকেন্ডে একটি মুভি ডাউনলোড করতে পারেন, তাহলে সিক্সজি দিয়ে আপনি এক সেকেন্ডে ১৪২ ঘন্টার ভিডিও কন্টেন্ট ডাউনলোড করতে পারবেন।
এছাড়াও আমেরিকার Federal Communications Commission (FCC) দ্বারা সিক্সজির জন্য বরাদ্দকৃত ফ্রিকোয়েন্সি ঠিক করা হয়েছে ৯৫ গিগাহার্টজ এবং ৩ টেরাহার্টজ যা কিনা এখনকার ফোরজি সেলফোনের ফ্রিকোয়েন্সির (৭০০ মেগাহার্টজ ও ২.৫ গিগাহার্টজ) ১৩৫ গুণ এবং ফাইভজি সেলফোনের ফ্রিকোয়েন্সির (২৮ গিগাহার্টজ ও ৩৯ গিগাহার্টজ ) ৩/৪ গুণ।
Offers from 6G
IoT with Cyberspace: মোবাইল নেটওয়ার্ক পোর্টেবিলিটির (Mobile Number Portability) কল্যাণে ইতোমধ্যেই একক অপারেটরের উপর নির্ভরতা কিছুটা হলেও। সিক্সজিতে এই নির্ভরতা আরো কমবে। ডিসেন্ট্রালাইজড নেটওয়ার্কের অন্তর্ভুক্ত হয়েও সব ডিভাইসে কানেক্টেড থাকার সুবিধাটা সবচেয়ে ভাল পাওয়া যাবে সিক্সজির মাধ্যমে।
দ্রুতগতির ইন্টারনেট এবং ডিভাইসের সহজলভ্যতার জন্য বিশ্বে কানেক্টেড
ডিভাইসের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। স্যামসাং তাদের 6G White Paper-এ উল্লেখ
করেছে যে, ২০৩০ সাল বিশ্বে সর্বমোট কানেক্টেড ডিভাইসের সংখ্যা হবে ৫০০
বিলিয়ন যা তখনকার অনুমিত জনসংখ্যার ৫৯ গুণ। সুতরাং আমরা বলতে পারি, ঐ সময় সিক্সজির প্রযুক্তি মানুষের চেয়ে মেশিনই ব্যবহার করবে বেশি। এই বিপুল সংখ্যক ডিভাইস কন্ট্রোল করার প্রযুক্তি ইতোমধ্যেই বিদ্যমান আর তা হল Internet of Things বা IoT। সিক্সজিতে IoT এর সাথে সাই-ফাই (Sci-fi) প্রযুক্তি মিলিয়ে এমন cyberspace ক্রিয়েট করা সম্ভব, যেখানে মানুষের চিন্তাভাবনাও (Human thought) প্রসেস করা যাবে। আর এটি সম্ভব হবে যদি সিগন্যালের Air Latency বা Latency কম থাকে। Latency মানে হল আমাদের ডিভাইস থেকে নিকটবর্তী টাওয়ারে যেতে কোন সিগনালের যে সময় লাগে। এই Latency ফোরজি এবং কম গতির ফাইভজি সিগনালের ক্ষেত্রে ১ মিলিসেকেন্ড বা ১০০০ মাইক্রোসেকেন্ড পর্যন্ত হয়; সিক্সজির ক্ষেত্রে সেটা হতে পারে ১০০ মাইক্রোসেকেন্ডেরও কম।
Mobile Holograms: হাই-রেজুলেশন ক্যামেরা ও ডিভাইস ডিসপ্লের সাথে সিক্সজি এর আলট্রা-হাইস্পিড নেটওয়ার্ক সুবিধা যোগ করে মোবাইল বা ট্যাবলেটের ডিসপ্লের সমান হলোগ্রাম (Hologram) এবং মানবাকৃতির হলোগ্রাম বানানো সম্ভব। এই প্রযুক্তির পরের ধাপ হল ডিজিটাল টুইনস বা রেপ্লিকা (Digital Twins/Replica) তৈরি করা। হলোগ্রাম বা রেপ্লিকা বানানোর জন্য ন্যুনতম ৫০০ গিগাবিট পার সেকেন্ড গতি সম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা প্রয়োজন যা ফোরজি বা ফাইভজি কোনটা দিয়েই সম্ভব না। এর সাথে প্রয়োজন রিয়েল টাইম ডেটা প্রসেসিং যেটা সিক্সজি দিয়ে সবচেয়ে ভালভাবে করা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। মানুষ, বস্তু এমনকি কোন স্থানেরও রেপ্লিকা বানানো সম্ভব যার মাধ্যমে ঘরে বসেই কারো সাথে যোগাযোগ করা, কোন জায়গা বা স্থাপনা পরিদর্শন, ইত্যাদি সম্ভব।
Hologram Source: nypost |
Extended Reality (XR): এটিকে একটি umbrella category বলা যেতে পারে যার মধ্যে Augmented Reality (AR), Virtual Reality (VR), Mixed Reality (MR)-সহ আরো যা যা সম্ভব সব থাকবে। গ্রাফিক্স এবং বিভিন্ন ওয়্যারেবল ডিভাইসের মাধ্যমে যত ধরণের ভার্চুয়াল এনভায়রনমেন্ট জেনারেট করা সভব তার সবগুলো পাওয়া সম্ভব এই Extended Reality-এর মাধ্যমে। এছাড়াও AR, VR, MR প্রত্যেকটারই কিছু সীমাবদ্ধতা আছে যা XR দিয়ে দূর করা সম্ভব।
Indoor Map: Google Map দিয়ে আউটডোর ম্যাপিং এর সর্বোচ্চ ব্যবহার সম্ভব। কিন্তু ইনডোর ম্যাপিং অর্থাৎ আপনার আশেপাশের এলাকায় কি হচ্ছে বা আপনার পাশের রুমে কি হচ্ছে তা দেখা যাবে সিক্সজির বদৌলতে। পারসোনাল সিকিউরিটি এবং এলাকাভিত্তিক আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এই প্রযুক্তি অনেক কাজে আসবে।
Requirements
সিক্সজির যুগে স্বাভাবিকভাবেই কনজিউমাররা নতুন এবং উন্নত প্রোডাক্ট ও সার্ভিস পাবে। কিন্তু তার জন্য প্রযুক্তিগত সাপোর্টও দরকার। দ্রুততর গতিতে রিয়েল টাইম ডাটা প্রসেসিং এবং সিগন্যালের low latency-এর প্রয়োজনীয়তার কথা আগেই বলেছি। এগুলোর সাথে বর্তমান মোবাইল ডিভাইসগুলোর ব্যাটারি লাইফ বাড়াতে হবে। সেই সাথে নেটওয়ার্ক আর্কিটেকচারাল হেলথ এবং AI integration এর মাধ্যমে নেটওয়ার্ক ও ডাটা সিকিউরিটির বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা না বললেই নয়।
Computing power: Requirement vs Capability Source: Samsung 6G White Paper |
Performance Requirements:
সিক্সজির মাধ্যমে উন্নত মাল্টিমিডিয়া সার্ভিস পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দরকার দ্রুতগতির ডেটা রেট। ফাইভজিতে সর্বোচ্চ ২০ জিবিপিএস পর্যন্ত ডাটারেট পাওয়া সম্ভব; আর সিক্সজির জন্য গবেষকরা মনে করছেননা ৫০০ জিবিপিএসের কম স্পিডে সার্ভিসগুলো চালানো সম্ভব।
Air Latency সম্পর্কে আগেই বলেছি; ডিভাইস থেকে কাছের টাওয়ার এ যেতে সিগনালের যে সময় লাগে। প্রাথমিক পর্যায়ে গবেষকরা Air Latency এর টার্গেট ধরেছেন ১০০ মাইক্রোসেকেন্ডের কম; End-to-End (E2E) মানে User-to-User বা Device-to-Device Latency এর টার্গেট ধরা হয়েছে ১ মিলিসেকেন্ডের কম।
যেকোন টেলিফোনি নেটওয়ার্ক সার্ভিসের জন্য কাভারেজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; সিক্সজিও তার ব্যতিক্রম নয়। ফোরজির ক্ষেত্রে কাভারেজের স্পিড হলো ৩৫০ কি.মি./ঘন্টা, অর্থাৎ প্রতি সেকেন্ডে কোন সিগন্যাল ৩৫০ কি.মি. দূরত্ব অতিক্রম করে। ফাইভজির ক্ষেত্রে এটি ৫০০ কি.মি./ঘন্টা। সিক্সজির জন্য কাভারেজ স্পিড ৭০০-৮০০ কি.মি./ঘন্টা পর্যন্ত উন্নীত করা লাগতে পারে বলে মনে করছেন গবেষকরা।
বর্তমান ফোরজি বা আপকামিং ফাইভজি টেকনোলজির মাধ্যমে ডিভাইসগুলোর কম্পিউটেশনাল এবিলিটি অর্জন হলেও তা বেশ লিমিটেড। সিক্সজির মাধ্যমে আমরা Extended Reality, Extensive AI Integration, Hologram সহ আরো যেসব সুবিধা পাওয়ার আশা করছি ঐগুলো পেতে ডিভাইসগুলোর কম্পিউটেশনাল এবিলিটি অনেক বাড়াতে হবে। সেই সাথে নেটওয়ার্ক ডিজাইন এমন হওয়া প্রয়োজন যাতে ডিভাইসগুলোর কম্পিউটেশনাল এবিলিটির সর্বোচ্চ সুবিধা নেয়া যায়। স্যামসাং এটাকে বলছে, "Communications and Computing Convergence"।
ফোরজিতে ডিভাইসগুলো প্রয়োজনীয় ক্যালকুলেশন ক্লাউড কম্পিউটেশনের মাধ্যমে হয়ে থাকে। ক্লাউড কম্পিউটিং মানে আমরা অনেকেই জানি; কোম্পানিগুলো ডেটা স্টোরেজের ক্ষেত্রে নিজেদের ইনফ্রাস্ট্রাকচার বা ডেটা সেন্টার ব্যবহার না করে ক্লাউড সার্ভিস প্রোভাইডারদের কাছ থেকে স্টোরেজ সাবস্ক্রাইব করে নেয়, সেই সাথে কিছু কম্পিউটেশনাল সুবিধাও পায়। ফাইভজিতে ক্লাউড কম্পিউটিং রিপ্লেস হয়েছে বা হবে এজ কম্পিউটিং (Edge Computing) দিয়ে। তার মানে এই না যে ক্লাউড কম্পিউটিং চলে যাচ্ছে; ক্লাউড থাকবে এবং বেশ ভালভাবেই থাকবে। এজ কম্পিউটিং-এর মানে হচ্ছে কোন কোম্পানি যে ক্লাউডটি ব্যবহার করবে সেটি সোর্চ/সাবস্ক্রাইবার মানে কোম্পানিটির সবচেয়ে কাছাকাছি থাকবে। ধরেন কোন কোম্পানি ডেটা স্টোরেজের জন্য Google Drive ব্যবহার করে। এই সার্ভিসটি দেয়ার জন্য Google তার নিজের সার্ভার ব্যবহার