Tuesday, September 29, 2020

6G is coming - কি কি থাকবে 6G তে

প্রযুক্তি জগতে ইতোমধ্যে সাড়া ফেলে দিয়েছে সিক্সজি (6G) প্রযুক্তি। না, সিক্সজি এখনো আসেনি, গুটিকয়েক কোম্পানি ফাইভজি (5G) ডেপ্লয়মেন্টের ব্যাপারে প্রাথমিক বা শেষ পর্যায়ে আছে মাত্র। তাহলে সিক্সজি এর কথা বলা হচ্ছে কেন? কারণ বিশ্বের বড় দেশগুলো ইতোমধ্যেই সিক্সজি কাজ শুরু করে দিয়েছে। সিক্সজি ডেপ্লয়মেন্টের সময়সীমাও নির্ধারণ করে ফেলেছে কিছু কোম্পানি। এসব নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে এই লেখায়।

Source: Venturebeat


Is It coming soon
বিভিন্ন দেশের মোবাইল অপারেটররা এখনো ফাইভজি ডেপ্লয়মেন্ট নিয়ে ব্যস্ত। বাংলাদেশে মাত্র কিছুদিন আগে ফোরজি এলো। সত্যি কথা বলতে, সিক্সজি প্রযুক্তি এখনো গবেষণা পর্যায়ে আছে। Ericsson, Huawei, NTT Docomo- সহ আরো কিছু কোম্পানির মতে এই প্রযুক্তি আসতে এখনো কম করে হলেও ১০ বছর সময় লাগবে।  কিন্তু তারপরও বিশ্বের বড় বড় মোবাইল ম্যানুফ্যাকচারাররা ফাইভজি ডেপ্লয়মেন্টের আগেই সিক্সজি এর গ্রাউন্ডওয়ার্ক করে রাখতে চাচ্ছে। এই বিষয়ে স্যামসাং একটি গবেষণাপত্র বা White Paper পাবলিশ করেছে। যেখানে তারা বলেছে, ২০২৮ সালের মধ্যে সিক্সজি ডেপ্লয়মেন্ট সম্ভব।
Timeline of 6G deployment Source: Samsung 6G White Paper

 
How fast will 6G be
যেকোন নতুন প্রযুক্তি আসলে সবার প্রথমে যে প্রশ্নটা আসে, কত দ্রুততর হবে এটি। সিক্সজি নিয়ে গবেষণা এখন যে পর্যায়ে রয়েছে, তা থেকে এটি কত দ্রুততর হবে তা বলা কিছুটা মুশকিল। কিন্তু International Telecommunication Union (ITU) কিছুটা আভাস দিয়েছে এই ব্যাপারে। তারা বলছে সেকেন্ডে ১ টেরাবাইট বা ৮,০০০ গিগাবিট পর্যন্ত স্পিড পাওয়া সম্ভব সিক্সজিতে; ফাইভজি-এর ডেটা স্পিডের (প্রতি সেকেন্ডে ২০ গিগাবিট) তুলনায় যেটি ৪০০ গুণ বেশি। অন্যভাবে যদি বলি, ফাইভজি প্রযুক্তি দিয়ে যদি আপনি নেটফ্লিক্স থেকে কয়েক সেকেন্ডে একটি মুভি ডাউনলোড করতে পারেন, তাহলে সিক্সজি দিয়ে আপনি এক সেকেন্ডে ১৪২ ঘন্টার ভিডিও কন্টেন্ট ডাউনলোড করতে পারবেন।

এছাড়াও আমেরিকার Federal Communications Commission (FCC) দ্বারা সিক্সজির জন্য বরাদ্দকৃত ফ্রিকোয়েন্সি ঠিক করা হয়েছে ৯৫ গিগাহার্টজ এবং ৩ টেরাহার্টজ যা কিনা এখনকার ফোরজি সেলফোনের ফ্রিকোয়েন্সির (৭০০ মেগাহার্টজ ও ২.৫ গিগাহার্টজ)  ১৩৫ গুণ এবং ফাইভজি সেলফোনের ফ্রিকোয়েন্সির (২৮ গিগাহার্টজ ও ৩৯ গিগাহার্টজ ) ৩/৪ গুণ। 


Offers from 6G

IoT with Cyberspace: মোবাইল নেটওয়ার্ক পোর্টেবিলিটির (Mobile Number Portability) কল্যাণে ইতোমধ্যেই একক অপারেটরের উপর নির্ভরতা কিছুটা হলেও। সিক্সজিতে এই নির্ভরতা আরো কমবে। ডিসেন্ট্রালাইজড নেটওয়ার্কের অন্তর্ভুক্ত হয়েও সব ডিভাইসে কানেক্টেড থাকার সুবিধাটা সবচেয়ে ভাল পাওয়া যাবে সিক্সজির মাধ্যমে। 
 
দ্রুতগতির ইন্টারনেট এবং ডিভাইসের সহজলভ্যতার জন্য বিশ্বে কানেক্টেড ডিভাইসের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। স্যামসাং তাদের 6G White Paper-এ উল্লেখ করেছে যে, ২০৩০ সাল বিশ্বে সর্বমোট কানেক্টেড ডিভাইসের সংখ্যা হবে ৫০০ বিলিয়ন যা তখনকার অনুমিত জনসংখ্যার ৫৯ গুণ। সুতরাং আমরা বলতে পারি, ঐ সময় সিক্সজির প্রযুক্তি মানুষের চেয়ে মেশিনই ব্যবহার করবে বেশি। এই বিপুল সংখ্যক ডিভাইস কন্ট্রোল করার প্রযুক্তি ইতোমধ্যেই বিদ্যমান আর তা হল Internet of Things বা IoT। সিক্সজিতে IoT এর সাথে সাই-ফাই (Sci-fi) প্রযুক্তি মিলিয়ে এমন cyberspace ক্রিয়েট করা সম্ভব, যেখানে মানুষের চিন্তাভাবনাও (Human thought) প্রসেস করা যাবে। আর এটি সম্ভব হবে যদি সিগন্যালের Air Latency বা Latency কম থাকে।  Latency মানে হল আমাদের ডিভাইস থেকে নিকটবর্তী টাওয়ারে যেতে কোন সিগনালের যে সময় লাগে। এই Latency ফোরজি এবং কম গতির ফাইভজি সিগনালের ক্ষেত্রে ১ মিলিসেকেন্ড বা ১০০০ মাইক্রোসেকেন্ড পর্যন্ত হয়; সিক্সজির ক্ষেত্রে সেটা হতে পারে ১০০ মাইক্রোসেকেন্ডেরও কম।

Mobile Holograms: হাই-রেজুলেশন ক্যামেরা ও ডিভাইস ডিসপ্লের সাথে সিক্সজি এর আলট্রা-হাইস্পিড নেটওয়ার্ক সুবিধা যোগ করে মোবাইল বা ট্যাবলেটের ডিসপ্লের সমান হলোগ্রাম (Hologram) এবং মানবাকৃতির হলোগ্রাম বানানো সম্ভব। এই প্রযুক্তির পরের ধাপ হল ডিজিটাল টুইনস বা রেপ্লিকা (Digital Twins/Replica) তৈরি করা। হলোগ্রাম বা রেপ্লিকা বানানোর জন্য ন্যুনতম ৫০০ গিগাবিট পার সেকেন্ড গতি সম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা প্রয়োজন যা ফোরজি বা ফাইভজি কোনটা দিয়েই সম্ভব না। এর সাথে প্রয়োজন রিয়েল টাইম  ডেটা প্রসেসিং যেটা সিক্সজি দিয়ে সবচেয়ে ভালভাবে করা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। মানুষ, বস্তু এমনকি কোন স্থানেরও রেপ্লিকা বানানো সম্ভব যার মাধ্যমে ঘরে বসেই কারো সাথে যোগাযোগ করা, কোন জায়গা বা স্থাপনা পরিদর্শন, ইত্যাদি সম্ভব।


Hologram Source: nypost

Extended Reality (XR): এটিকে একটি umbrella category বলা যেতে পারে যার মধ্যে Augmented Reality (AR), Virtual Reality (VR), Mixed Reality (MR)-সহ আরো যা যা সম্ভব সব থাকবে। গ্রাফিক্স এবং বিভিন্ন ওয়্যারেবল ডিভাইসের মাধ্যমে যত ধরণের ভার্চুয়াল এনভায়রনমেন্ট জেনারেট করা সভব তার সবগুলো পাওয়া সম্ভব এই Extended Reality-এর মাধ্যমে। এছাড়াও AR, VR, MR প্রত্যেকটারই কিছু সীমাবদ্ধতা আছে যা XR দিয়ে দূর করা সম্ভব।

Indoor Map: Google Map দিয়ে আউটডোর ম্যাপিং এর সর্বোচ্চ ব্যবহার সম্ভব। কিন্তু ইনডোর ম্যাপিং অর্থাৎ আপনার আশেপাশের এলাকায় কি হচ্ছে বা আপনার পাশের রুমে কি হচ্ছে তা দেখা যাবে সিক্সজির বদৌলতে। পারসোনাল সিকিউরিটি এবং এলাকাভিত্তিক আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এই প্রযুক্তি অনেক কাজে আসবে।


Requirements
 
সিক্সজির যুগে স্বাভাবিকভাবেই কনজিউমাররা নতুন এবং উন্নত প্রোডাক্ট ও সার্ভিস পাবে। কিন্তু তার জন্য প্রযুক্তিগত সাপোর্টও দরকার। দ্রুততর গতিতে রিয়েল টাইম ডাটা প্রসেসিং এবং সিগন্যালের low latency-এর প্রয়োজনীয়তার কথা আগেই বলেছি। এগুলোর সাথে বর্তমান মোবাইল ডিভাইসগুলোর ব্যাটারি লাইফ বাড়াতে হবে। সেই সাথে নেটওয়ার্ক আর্কিটেকচারাল হেলথ এবং AI integration এর মাধ্যমে নেটওয়ার্ক ও ডাটা সিকিউরিটির বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা না বললেই নয়। 
Computing power: Requirement vs Capability Source: Samsung 6G White Paper

Performance Requirements: 

সিক্সজির মাধ্যমে উন্নত মাল্টিমিডিয়া সার্ভিস পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দরকার দ্রুতগতির ডেটা রেট। ফাইভজিতে সর্বোচ্চ ২০ জিবিপিএস পর্যন্ত ডাটারেট পাওয়া সম্ভব; আর সিক্সজির জন্য গবেষকরা মনে করছেননা ৫০০ জিবিপিএসের কম স্পিডে সার্ভিসগুলো চালানো সম্ভব।

Air Latency সম্পর্কে আগেই বলেছি; ডিভাইস থেকে কাছের টাওয়ার এ যেতে সিগনালের যে সময় লাগে। প্রাথমিক পর্যায়ে গবেষকরা Air Latency এর টার্গেট ধরেছেন ১০০ মাইক্রোসেকেন্ডের কম; End-to-End (E2E) মানে User-to-User বা Device-to-Device Latency এর টার্গেট ধরা হয়েছে ১ মিলিসেকেন্ডের কম।
 
যেকোন টেলিফোনি নেটওয়ার্ক সার্ভিসের জন্য কাভারেজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; সিক্সজিও তার ব্যতিক্রম নয়। ফোরজির ক্ষেত্রে কাভারেজের স্পিড হলো ৩৫০ কি.মি./ঘন্টা, অর্থাৎ প্রতি সেকেন্ডে কোন সিগন্যাল ৩৫০ কি.মি. দূরত্ব অতিক্রম করে। ফাইভজির ক্ষেত্রে এটি ৫০০ কি.মি./ঘন্টা। সিক্সজির জন্য কাভারেজ স্পিড ৭০০-৮০০ কি.মি./ঘন্টা পর্যন্ত উন্নীত করা লাগতে পারে বলে মনে করছেন গবেষকরা। 

Comparison 5G-6G. Source: Samsung 6G White Paper

Architectural Requirements:

বর্তমান ফোরজি বা আপকামিং ফাইভজি টেকনোলজির মাধ্যমে ডিভাইসগুলোর কম্পিউটেশনাল এবিলিটি অর্জন হলেও তা বেশ লিমিটেড। সিক্সজির মাধ্যমে আমরা Extended Reality, Extensive AI Integration, Hologram সহ আরো যেসব সুবিধা পাওয়ার আশা করছি ঐগুলো পেতে ডিভাইসগুলোর কম্পিউটেশনাল এবিলিটি অনেক বাড়াতে হবে। সেই সাথে নেটওয়ার্ক ডিজাইন এমন হওয়া প্রয়োজন যাতে ডিভাইসগুলোর কম্পিউটেশনাল এবিলিটির সর্বোচ্চ সুবিধা নেয়া যায়। স্যামসাং এটাকে বলছে, "Communications and Computing Convergence"।

ফোরজিতে ডিভাইসগুলো প্রয়োজনীয় ক্যালকুলেশন ক্লাউড কম্পিউটেশনের মাধ্যমে হয়ে থাকে। ক্লাউড কম্পিউটিং মানে আমরা অনেকেই জানি; কোম্পানিগুলো ডেটা স্টোরেজের ক্ষেত্রে নিজেদের ইনফ্রাস্ট্রাকচার বা ডেটা সেন্টার ব্যবহার না করে ক্লাউড সার্ভিস প্রোভাইডারদের কাছ থেকে স্টোরেজ সাবস্ক্রাইব করে নেয়, সেই সাথে কিছু কম্পিউটেশনাল সুবিধাও পায়। ফাইভজিতে ক্লাউড কম্পিউটিং রিপ্লেস হয়েছে বা হবে এজ কম্পিউটিং (Edge Computing) দিয়ে। তার মানে এই না যে ক্লাউড কম্পিউটিং চলে যাচ্ছে; ক্লাউড থাকবে এবং বেশ ভালভাবেই থাকবে। এজ কম্পিউটিং-এর মানে হচ্ছে কোন কোম্পানি যে ক্লাউডটি ব্যবহার করবে সেটি সোর্চ/সাবস্ক্রাইবার মানে কোম্পানিটির সবচেয়ে কাছাকাছি থাকবে। ধরেন কোন কোম্পানি ডেটা স্টোরেজের জন্য Google Drive ব্যবহার করে। এই সার্ভিসটি দেয়ার জন্য Google তার নিজের সার্ভার ব্যবহার করে আবার বিভিন্ন দেশে Google এর যে সার্ভারগুলো রয়েছে সেগুলো ব্যবহার করে। এখন মনে করেন, কয়েকটি দেশের জন্য একটি সার্ভার না থেকে যদি এমন হয় একটি দেশের জন্য একটি সার্ভার এবং ঐ সার্ভারের অবস্থানও ঐ দেশের অনেক কাছে তাইলে কেমন হয়? হ্যাঁ, এই কাজটিই করার চেষ্টা করা হচ্ছে ফাইভজি টেকনোলজিতে। এর ফলে যেটা হবে Air latency কম হবে, জটিল ক্যাল্কুলেশনগুলি ডিভাইসগুলো অনেক তাড়াতাড়ি করতে পারবে এবং কম ব্যান্ডউইথ দরকার হবে তাই খরচও কমে আসবে। তাহলে সিক্সজিতে কি হবে? সিক্সজিতে এই এজ কম্পিউটিংকে আরো উচ্চমাত্রায় উত্তীর্ণ করা হবে; যেমন এক দেশ এক সার্ভার থেকে এক দেশের ৫০টি কোম্পানির জন্য এক সার্ভার করা হতে পারে। ডিভাইসগুলোর কম্পিউটেশনাল এবিলিটি বাড়ানো হবে, সেই সাথে হাই-এন্ড ডিভাইস যেমন এরোপ্লেন, Low Earth Orbit (LEO) বা Geo-stationary Orbit (GEO) ্স্যাটেলাইট, ইত্যাদি সিক্সজি নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত করা সম্ভব হবে। 

Architectural Evolution. Source: Samsung 6G White Paper


Who are working
 
গত বছরে (২০১৯) বেশ কিছু মোবাইল ও অন্যান্য ডিভাইস উৎপাদনকারী কোম্পানি সিক্সজি নিয়ে কাজ করার ঘোষণা দেয়। এক্ষেত্রে দেশ হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়া সবচেয়ে এগিয়ে। স্যামসাং ও এলজি ইতোমধ্যেই দক্ষিণ কোরিয়াতে সিক্সজি গবেষণাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে যার মাধ্যমে ৮০০ মিলিয়ন ডলারের প্রজেক্ট চালানোর পরিকল্পনা আছে তাদের। পিছিয়ে থাকেনি চায়নাও; Huawei ইতোমধ্যেই সিক্সজি-ভিত্তিক প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে। কিছুটা পরে শুরু করলেও কোরিয়া ও চায়নাকে ধরে ফেলতে আশাবাদী জাপান। এই বছরের (২০২০) জানুয়ারীতে জাপান তাই শুরু করেছে সিক্সজি প্রজেক্টের কাজ। Ericsson এবং আরো কিছু সুইডিশ কোম্পানি সম্মিলিতভাবে সিক্সজি প্রজেক্টের কাজ শুরু করে গত বছর।  ফিনল্যান্ডের University of Oulu, 6Genesis নামে একটি গবেষণা প্রজেক্টের কাজ শুরু করেছে, যার সাথে যুক্ত আছে Nokia। আমেরিকাও সিক্সজি নিয়ে প্রাথমিক গবেষণাকার্যের জন্য ফ্রিকোয়েন্সি স্পেক্ট্রাম বরাদ্দ করেছে। Sony, NTT Docomo এবং Intel পার্টনারশিপের মাধ্যমে সিক্সজি প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা করেছে। দক্ষিণ কোরিয়ান টেলিকম কোম্পানি SK Telecom, অন্য আরো কোম্পানি যেমন Ericsson, Nokia ও Samsung এর সাথে সম্মিলিতভাবে সিক্সজি প্রজেক্টের কাজ শুরু করেছে।


মোবাইল ইন্ডাস্ট্রি এবং মোবাইল টেলিফোনি সিস্টেম ইতোমধ্যেই অনেক উন্নত হয়েছে। সিডিএমএ (CDMA), টুজি যুগ পার হয়ে আমরা ফোরজি যুগে পা রেখেছি। বিভিন্ন দেশে ইতোমধ্যেই ফাইভজি ডিপ্লয়মেন্টের কাজ শুরু করলেও এর কমার্শিয়াল সাক্সেস নির্ণয় করতে সময় লাগবে। বাংলাদেশেও ২০২১ সালে ফাইভজি ডিপ্লয়মেন্টের টাইমলাইন নির্ধারণ করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে সিক্সজি নিয়ে চিন্তা করা অনেকটা গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল গোছের শোনালেও সিক্সজি ডিপ্লয়মেন্টের ক্ষেত্রে দরকারী গবেষণার জন্য সময় এবং বাজেট নির্ধারণের জটিলতা বিবেচনা করলে এটি বেশ সময়েপযোগী সিদ্ধান্তই হয়েছে বলে মনে হয়। 



Reference:










Friday, September 18, 2020

How Big is ACI

Advanced Chemical Industries Ltd. বা ACI Ltd. (এসিআই লিমিটেড) বাংলাদেশের বড় conglomerate-গুলোর মধ্যে একটি। হেলথকেয়ার, কনজ্যুমার গুডস ও ইলেকট্রনিক্স, কৃষি এবং রিটেইল এই চারটি খাতে মোট ৩৯ ধরণের পণ্য বিক্রি করে এসিআই। ১৫ বিলিয়ন টাকা মার্কেট ভ্যালু এবং ৬৩ বিলিয়ন টাকা রেভিনিউ জেনারেটিং conglomerate-টির সাবসিডিয়ারি কোম্পানি আছে ১৪টি, জয়েন্ট ভেঞ্চার এবং এসোসিয়েট কোম্পানি আছে ৪টি এবং ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্ট আছে ১২টি। এতগুলো ব্যবসায় অন্তর্ভুক্ত থাকার পরও আগের বছরগুলোতে এসিআইয়ের প্রফিট জেনারেশনে ধারাবাহিকতার অভাব ছিলো। তার উপর গত বছর অর্থাৎ ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে এসিআই প্রায় ৯০ কোটি টাকা লোকসান করে। এসিআইয়ের ইতিহাস, বিভিন্ন বিজনেস ইউনিট এবং কোম্পানিটির রেভিনিউ জেনারেশন ও প্রফিটেবিলিটির অবস্থা নিয়ে আলোচনা করবো আজকের ভিডিওতে

History

১৯২৬ সালে চারটি ব্রিটিশ কেমিক্যাল কোম্পানির মার্জারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় Imperial Chemical Industries বা ICIকোম্পানিগুলো হল - Brunner Mond, Nobel Explosives, The United Alkali Company এবং British Dyestuffs Corporation ইম্পেরিয়াল কেমিকেলের প্রোডাক্টের মধ্যে ছিল বিভিন্ন ধরণের কেমিক্যাল, বিস্ফোরক, কীটনাশক, পেইন্ট এবং রেজিন (রজন)। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি হিসেবে আরো বেশ কয়েকটি দেশে অপারেট করছিল ICIতারই ধারাবাহিকতায় ভারতীয় উপমহাদেশে কোম্পানিটি ICI (India) Ltd. নামের একটি সাবসিডিয়ারির মাধ্যমে ব্যবসা করা শুরু করে ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান আলাদা হওয়ার পর ICI (India) এর করাচি অফিসের নাম পরিবর্তন করে ICI (Pakistan) Ltd. রাখা হয়। পরে ১৯৬৮ সালে কোম্পানিটি স্থান পরিবর্তন করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আসে। পরবর্তীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর এই ICI (Pakistan)-ই ১৯৭৩ সালে ICI Bangladesh Manufactures Ltd. নামে বাংলাদেশে অপারেশন শুরু করে। ১৯৭৬ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে অন্তর্ভুক্ত হয় কোম্পানিটি। পরবর্তীতে ১৯৯২ সালের ৫ই মে মূল কোম্পানি ICI Plc. তার ৭০% শেয়ার লোকাল শেয়ারহোল্ডারদের কাছে বিক্রি করে। আর এই ডাইভেস্টমেন্টের পরেই ICI Bangladesh, ACI নামে আত্মপ্রকাশের মাধ্যমে বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করে।

Business Expansion

মোট চারটি Strategic Business Unit (SBU)-এ ব্যবসা করছে এসিআই। সেগুলো হল - ১) Health Care ২) Consumer Brands ৩) Agribusinesses এবং ৪) Retail Chain। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রধানত ফার্মাসিউটিক্যালস ও পেস্ট কন্ট্রোল পণ্যের ব্যবসাতে অন্তর্ভুক্ত থাকলেও পরবর্তীতে একের পর এক সাবসিডিয়ারি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিভিন্ন সেগমেন্টে প্রবেশ করে এসিআই। 

এসিআই দেশীয় ফার্মাসিউটিক্যাল মার্কেটে প্রায় ত্রিশ বছর ধরে ব্যবসা করছে। এই ইন্ডাস্ট্রিতে এসিআইয়ের মার্কেট শেয়ার ৪%। এখন পর্যন্ত ১০০টির বেশি therapeutic class এ ২৫০টিরও বেশি মলিকিউল বাজারে এনেছে এসিআই। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩৩টি নতুন মলিকিউল বাজারে আনে কোম্পানিটি। দেশের চাহিদা মিটিয়ে ৪টি মহাদেশের ৩০টি দেশে ঔষুধ রপ্তানিও করছে এসিআই। এছাড়াও আফ্রিকা ও মধ্য আমেরিকাতে ১৫টিরও বেশি দেশে ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য রেগুলেটরী কার্যক্রম চলছে।

পেস্ট এবং নন-পেস্ট কন্ট্রোল এই দুই ধরণের প্রোডাক্টের মাধ্যমে হোম কেয়ার সেগমেন্টে উপস্থিতি রয়েছে এসিআইয়ের। সেই সঙ্গে আমেরিকান কনজিউমার ব্র্যান্ড SC Johnson এর ম্যানুফ্যাকচারিং ও ডিস্ট্রিবিউশন পার্টনার হয়ে বিভিন্ন পণ্য বাজারজাত করছে এসিআই। এরোসল মার্কেটে ACI Aerosol কাস্টমারদের নাম্বার ওয়ান চয়েস। Neilson এর তথ্যমতে, এরোসল মার্কেটে ৯৪% এর বেশি মার্কেট শেয়ার ACI Aerosol এর। মসকুইটো কয়েল মার্কেটে এসিআই কয়েলের শেয়ার প্রায় ৮%। এই মার্কেটে অন্য নন-ব্র্যান্ডেড প্রোডাক্টের আধিক্যের কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এসিআইয়ের মার্কেট শেয়ার কমেছে। নন-পেস্ট কন্ট্রোল প্রোডাক্টের মধ্যে Angelic Air Freshner এবং টয়লেট ক্লিনার হিসেবে Vanish ব্র্যান্ডের পণ্য বাজারজাত করেছে এসিআই।

চার দশকের বেশি সময় ধরে স্যাভলন ব্র্যান্ডের বিভিন্ন পণ্য বাংলাদেশে আছে। মূল কোম্পানি ইম্পেরিয়াল কেমিক্যালের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ১৯৯২ সাল থেকে এসিআইয়ের অধীনে চলে আসে ব্র্যান্ডটি। শুরুতে এই পণ্যের ব্র্যান্ডের তালিকায় শুধুমাত্র এন্টিসেপ্টিক লিকুইড ও ক্রিম থাকলেও ১৯৯৮ সালে হ্যান্ডওয়াশ অন্তর্ভুক্ত হয়। পরবর্তীতে এসিআইয়ের টয়লেট্রিজ বিজনেসের অধীনে স্যাভলনের সাবান, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, এবং ওয়াইপ্স সহ আরো বিভিন্ন পণ্য অন্তর্ভুক্ত হয়। এন্টিসেপটিক ইন্ডাস্ট্রিতে স্যাভলনের এন্টিসেপটিক পণ্যের মার্কেট শেয়ার ৮৪% এর বেশি। করোনাভাইরাসের প্রকোপে এসিআইয়ের টয়লেট্রিজ বিজনেসে স্পেশালি সাবান, হ্যান্ড ওয়াশ, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ইত্যাদি পণ্য বিক্রি অনেকগুণে বেড়েছে।

২০০০ সালে Creative Communication Ltd. নামের সাবসিডিয়ারি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মিডিয়া এন্ড কমিউনিকেশন্স ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশ করে এসিআই। মিডিয়া প্ল্যানিং, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টসহ আরো বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করছে Creative Communication। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কোম্পানিটির আয় ছিল ৭.৫ কোটি টাকা এবং প্রফিট ছিল ১ কোটি টাকা।

২০০৩ সালে এসিআই ও টাটা গ্লোবাল বেভারেজ ওভারসীজ হোল্ডিংস লিমিটেড এর জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি Tetley ACI Bangladesh-এর মাধ্যমে চা উৎপাদন, প্যাকেজিং ও বিক্রি শুরু করে এসিআই। এই কোম্পানির দুটি প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ড টাটা টি, ও টেটলি।

২০০৪ সালে ACI Salt Ltd. - এর মাধ্যমে এডিবল সল্ট মার্কেটে ব্যবসা শুরু করে এসিআই। বিগত দশকে ৮ বার সল্ট মার্কেটে শীর্ষ ব্র্যান্ডের জায়গা ধরে রেখেছে এসিআই সল্ট। বাজারে BSTI এর অনুমোদনহীন, বাইরে থেকে আমদানি করা নিম্নমানের লবণ বিক্রেতার আধিক্যের কারণে এসিআই, মোল্লা, কনফিডেন্সসহ দেশীয় কোম্পানিগুলো বেশ কয়েকবছর ধরে ব্যাপক প্রতিযোগিতার মধ্যে ব্যবসা করে আসছে। এই প্রতিযোগিতার মধ্যেও এসিআই সল্ট গুণগতমানের দিক থেকে এখনো সবার শীর্ষে অবস্থান করছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কোম্পানিটির আয় ছিল ১৯০ কোটি টাকা এবং প্রফিট ছিল ৯ কোটি টাকা। 

একই বছর (২০০৪ সালে) এসিআই ভারতের গোদরেজ এগ্রোভেট-এর সাথে আরেকটি জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি, ACI Godrej Agrovet Pvt. Ltd প্রতিষ্ঠা করে যার মাধ্যমে কোম্পানিটি সব ধরণের এনিমেল ফিড (পোলট্রি, একুয়া, ক্যাটল ফিড) ও একদিনের মুরগীর বাচ্চা উৎপাদন ও বিক্রয়ের সাথে সংযুক্ত হয়।

এসিআই সিড বিজনেস শুরু করে ২০০৬ সালে। Bangladesh Rural Development Academy, Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman Agricultural University (BSMRAU), ও Bangladesh Agricultural University-তে এসিআইয়ের রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট স্টেশন রয়েছে। এসিআই সীড USAID, IRRI, IFC, KATALYST সহ বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানীর সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করছে। নতুন প্রজাতির বোরো চাল, হাইব্রিড চাল, ভুট্টা ইত্যাদি বাজারে আনার মাধ্যমে সমগ্র সীড মার্কেটের ৭০% এর বেশি শেয়ার দখল করতে সক্ষম হয়েছে এসিআই।

২০০৮ সাল এসিআইয়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর। এ বছর বেশ কিছু নতুন ব্যবসার সাথে যুক্ত হয় এসিআই। এই বছর সারফেস কেয়ার ক্যাটাগরিতে প্রবেশ করে এসিআই যেখানে বর্তমানে গ্লাস, ফ্লোর ক্লিনার হিসেবে Shinex ব্র্যান্ডের পণ্য বাজারে রয়েছে। Female Hygiene ক্যাটাগরিতে Savlon Freedom Sanitary Napkin launch করা হয় এই বছর। বর্তমানে স্যানিটারি ন্যাপকিন ইন্ডাস্ট্রিতে এর মার্কেট শেয়ার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এছাড়াও গত অর্থবছর অর্থাৎ ২০১৮-১৯ এ Female Hygiene ও Baby Care সেগমেন্টে ৯৫% প্রবৃদ্ধি অর্জন করে এসিআই।

২০০৮ সালেই ফুড বিজনেসে প্রবেশ করে এসিআই। ACI Pure Flour Ltd (ACFL) নামের সাবসিডিয়ারি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে PURE ব্র্যান্ডের আটা, ময়দা, সুজি, ব্রাউন আটা, মাল্টিগ্রেইন আটা ইত্যাদি বাজারজাত করা হয়। এর মধ্যেই ৩০% এর বেশি মার্কেট শেয়ার নিয়ে মার্কেটে শক্ত অবস্থান করে নিয়েছে ACI Pure Flour Ltd। অন্যদিকে ACI Foods Ltd  নামের আরেকটি সাবসিডিয়ারির মাধ্যমে PURE এবং FUN ব্র্যান্ডের অধীনে বেসিক স্পাইস, মিক্সড স্পাইস, ন্যুডলস, এরোমেটিক রাইস, কেক, চানাচুর, ক্যান্ডি, চাটনি ইত্যাদি পণ্য মার্কেটে এনেছে এসিআই।

২০০৮ সালে সুপারস্টোর হিসেবে এসিআই লজিস্টিক্সের অধীনে যাত্রা শুরু করে স্বপ্ন। বাংলাদেশের প্রধান শহরগুলো যেমন ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে ১৩০টি আউটলেটের মাধ্যমে ব্যবসা করছে যার মধ্যে ৬১টি তার নিজের, এবং বাকিগুলো ফ্র্যাঞ্জাইজিস্টোর। রিটেল চেইন মার্কেটের প্রায় ৫০% মার্কেট শেয়ার নিয়ে শীর্ষে আছে স্বপ্ন। ২০১৭ সালে স্বপ্ন shwapno.com এর মাধ্যমে ই-কমার্স মার্কেটেও প্রবেশ করেছে। এছাড়াও বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্র সম্প্রসারণে GLOBAL G.A.P এর সাথে কাজ করে চলেছে এসিআই লজিস্টিক্স । 

সুপারস্টোর হিসেবে আগোরা, মীনাবাজারের পরে আসলেও স্বপ্ন খুব দ্রুত মার্কেট শেয়ার ধরতে সক্ষম হয়। তবে শুরুতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন  হতে হয় স্বপ্নকে। অন্যান্য সুপার শপগুলোর মত শুরুতে স্বপ্নেরও টার্গেট ছিল দেশের এফ্লুয়েন্ট ক্লাসের লোকজন। সেই কারণে শুরু থেকেই আগোরা ও মীনা বাজারের কাছে প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয় স্বপ্ন। সেই সাথে হাইজিন মেইনটেইনেন্স, বিভিন্ন পণ্যের সহজলভ্যতার ব্যাপারেও ক্রেতাদের বেশ অভিযোগ ছিল। এসব কারণে ঐ সময় স্বপ্নের রিটেইল আউটলেটের সংখ্যাও কমতে থাকে। 

পরবর্তীতে বেশ কিছু সময়েপোযোগী পদক্ষেপের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ায় স্বপ্ন। পণ্যের দাম কমানো, প্রোডাক্ট পোর্টফোলিও বাড়ানো সহ সব শ্রেণীর ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার টার্গেট নিয়ে আগাতে থাকে সুপারশপটি। এছাড়াও পরবর্তীতে Seed to Shelf নীতির মাধ্যমে কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দিতে সরাসরি এগ্রোলিংক্স ও লজিস্টিক্স একসাথে কাজ শুরু করে। সুপার শপ চেইন মার্কেটের প্রায় অধের্ক দখল করে রাখলেও প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে কোন বছরই লাভের মুখ দেখেনি স্বপ্ন। এজন্য কোম্পানির এড ও মার্কেটিং বিভাগে বেশি খরচ করা, বড় রকমের লোন নেয়ার কারণে লোন বা ইন্টরেস্ট এক্সপেন্স বেশি হওয়াকে কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে। ভবিষ্যতে লোনের মাধ্যমে ফাইনান্সিংয়ের উপর নির্ভরতা কমিয়ে ইক্যুইটি ফাইনান্সিংয়ের উপর জোর দেয়ার কথা চিন্তা করছে কোম্পানিটি।

Surface Care, Hygiene, Supermarket এবং Food ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশের বছরেই ইলেক্ট্রনিক্স মার্কেট ও প্যাকেজিং বিজনেসে প্রবেশ করে এসিআই। এই বছরই এসিআই বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ড Panasonic-এর টিভি, রেফ্রিজারেটর, এয়ার কন্ডিশনার ইত্যাদি পণ্যের অফিসিয়াল ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে এই সেগমেন্টে নিজেদের ব্র্যান্ড "Sparkle" এর এয়ার কন্ডিশনার বাজারজাত করা হয়। এই বছরের শেষ দিকে Premiaflex Plastics Ltd. নামের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ফ্লেক্সিবল প্যাকেজিং, কনজুমার প্লাস্টিকসহ অন্যান্য প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুত ও বাজারজাতকরণ শুরু করে এসিআই।

২০১২ সালে এডিবল অয়েল মার্কেটে প্রবেশ করে এসিআই। ঐ বছরই ACI Nutrilife Rice Bran Oil বাজারে আসে। ২৫% এর বেশী মার্কেট শেয়ার অর্জন করে রাইস ব্র্যান অয়েল মার্কেটে ভাল অবস্থান আছে নিউট্রিলাইফের। এক্ষেত্রে বলে রাখি, রাইস ব্র্যান অয়েল, ধানের বাইরের স্তর থেকে সংগ্রহীত, উচ্চ তাপমাত্রার রান্না এবং ডিপ-ফ্রাইংয়ের জন্য উপযোগী তেল যাতে ফ্যাটি এসিড ও ভিটামিন-ই এর আধিক্য রয়েছে। ২০১৬ সালে নিজেদের আরেকটি ব্র্যান্ড PURE-এর সয়াবিন অয়েল বাজারে আনে এসিআই। এছাড়াও আমদানিকৃত ব্র্যান্ড Le Blanc Premium Sunflower Oil এর মাধ্যমেও ব্যবসা করছে সাবসিডিয়ারি কোম্পানি ACI Edible Oils Ltd.। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কোম্পানিটির আয় ছিল ৭৭ কোটি টাকা এবং প্রফিট ছিল ১ কোটি টাকা।

২০১৩ সালে Neem Laboratories Pvt. Ltd. অ্যাকুয়ার করার মাধ্যমে হারবাল পণ্য বিক্রি শুরু করে এসিআই। সেই সাথে দেশীয় পেইন্ট মার্কেটে যাত্রা শুরু করে কোম্পানিটি। পেইন্ট বিজনেস শুরু করার পর ডেকোরেটিভ পেইন্ট, প্রোটেক্টিভ, মেরিন ও পাউডার কোটিং, ইত্যাদি সেগমেন্টে বিশ্বখ্যাত পেইন্ট ও কোটিং কোম্পানি Akzonobel এর বিভিন্ন ব্র্যান্ড যেমন International, Dulux, Interpon, Duwel-এর পণ্য বাজারে এনেছে এসিআই। তবে মোট বিদেশী-দেশী আরো ৪৪টি প্লেয়ার মার্কেটে থাকার কারণে বাংলাদেশে পেইন্ট ইন্ডাস্ট্রিতে খুব কম মার্কেট শেয়ার এসিআই পেইন্টস-এর। 

ঐ বছরের শুরুর দিকে US সহ অন্যান্য রেগুলেটেড ফার্মাসিউটিক্যাল মার্কেটে ব্যবসা করার জন্য ACI HealthCare Ltd. নামের একটি সাবসিডিয়ারি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করা হয়। নারায়ণগঞ্জে কোম্পানিটির একটি ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্ট রয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কোম্পানিটি প্রায় ৩০০ কোটি টাকা আয় করলেও ৩৫ কোটি টাকা লসের মুখ দেখেছে।

২০১৪ সালে Men's grooming এবং ২০১৫ সালে IT এবং মোবাইল ফোন মার্কেটে প্রবেশ করে এসিআই। যদিও এসব বিজনেসে খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থানে নেই কোম্পানিটি। 

২০১৬ সালে জাপানীজ ব্র্যান্ড Yamaha-এর মোটরসাইকেলের ডিলারশীপ অর্জন করার মাধ্যমে বাইক বিজনেস শুরু করে এসিআইয়ের সাবসিডিয়ারি কোম্পানি ACI Motors। ১৫০ সিসি সেগমেন্টের বাইক বিক্রিতে এসিআইয়ের আয় সবচেয়ে বেশি। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে এই সেগমেন্টের বাইক বিক্রিতে ৩৩% প্রবৃদ্ধি এসেছে। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম এন্টি-লক ব্রেকিং সিস্টেম সম্বলিত বাইক বাজারে আনে এসিআই। ২০১৯ সালের মে মাসে এসিআই মটরস লোয়ার সেগমেন্ট অর্থাৎ ১২৫ সিসি এবং তার নিচের সেগমেন্টগুলোয় Original Equipment Manufacturer (OEM) হিসেবে প্রবেশ করার ঘোষণা দেয় এবং Completely Built Unit বা CBU বাইক বিক্রির পাশাপাশি Completely Knocked Down (CKD) বাইক বিক্রয় শুরু করে। এই উদ্দেশ্যে ACI Motors, Yamaha Motors Company ও Yamaha Motor India Sales এর সাথে যুক্ত হয়ে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাইক ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্টও প্রতিষ্ঠা করেছে। 

গত ৮ বছরের বেশি সময় ধরে লোকাল বাইক ম্যানুফাকচারাররা ভ্যাট, শুল্ক, ও ট্যাক্স রেটের ক্ষেত্রে সুবিধা পেয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ইয়ামাহার মত বিদেশী বাইক ম্যানুফাকচারাররা বাংলাদেশে ফ্যাক্টরি নির্মাণের মাধ্যমে বাইক ম্যানুফাকচারিংয়ে উৎসাহিত হয়েছে। বেশ কয়েক বছর ধরে বেশিদামের হাইয়ার সেগমেন্টে ব্যবসা করলেও ১২৫ সিসি ও তার নিচের সেগমেন্টে প্রবেশ করছে এসিআই মটরস। ১২৫ সিসি সেগমেন্টে ACI Motors বাজারে এনেছে Yamaha Saluto Disc Brake মূল্য ১২০,০০০ টাকা। এত কম দামে ইয়ামাহার বাইক এর আগে বাংলাদেশে আসেনি। যেটি ইয়াং জেনারেশনের বাইকপ্রেমীদের একটি সুখবর।

ACI Motors এর উল্লেখযোগ্য ব্র্যান্ডের বাইক বললে FAZER FI, YZF R15 and FZS FI এর কথা বলতে হয়। এছাড়াও ঢাকা বাইক কার্নিভাল, বাইক ফিয়েস্টা ও সবচেয়ে বড় বাইক লোগো বানিয়ে গিনেজ বুকে নাম উঠানোসহ ইত্যাদি ইভেন্টের মাধ্যমে দেশীয় বাইক মার্কেটে বিশেষ করে ১৫০ সিসি এবং হাইয়ার সেগমেন্টে বড় মার্কেট শেয়ার অর্জনে এগিয়ে আছে এসিআই। 

গত তিন বছরে ACI Motors ১৯% প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এই কোম্পানির অধীনে আরেকটি Strategic Business Unit হচ্ছে - Farm Mechanization। এই সেগমেন্টে "সোনালিকা" ব্র্যান্ডের ট্রাক্টর প্রধান পণ্য। এছাড়াও এই সেগমেন্টের প্রোডাক্ট পোর্টফোলিওতে ডিজেল ইঞ্জিন, রিপার, রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টার, ওয়াটার পাম্প, মিনি কম্বাইন্ড হারভেস্টার ইত্যাদি আছে। 

Agri-Machineries ছাড়াও কৃষিক্ষেত্রে আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এসিআই। ACI Agrolinks Ltd. নামের সাবসিডিয়ারি কোম্পানির মাধ্যমে কৃষকদের জন্য ফরোয়ার্ড ও ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ তৈরি করা,  এবং তাদের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি মার্কেটে আনার মাধ্যমে ফরোয়ার্ড ফুড মার্কেট পয়েন্ট তৈরি হচ্ছে। এক্ষেত্রে এফিশিয়েন্ট ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেল প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে সেইফ ফুড সেক্টরে প্রবেশ করাই এগ্রোলিংকস-এর লক্ষ্য। ইতোমধ্যেই মোহাম্মদপুরে "Fisharbour" নামে একটি ফরোয়ার্ড মার্কেট তৈরি করা হয়েছে যার মাধ্যমে হাইজেনিক মাছ বিক্রি হবে। এছাড়া এগ্রোলিংকসের মাধ্যমে চীন, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম ইত্যাদি দেশে পণ্য রপ্তানিও হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন কৃষিপণ্য কৃষক ও প্রান্তিক ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করার সুযোগ ও তৈরি করা হচ্ছে।

Animal Health সেগমেন্টে Poultry, Cattle, Vaccine ও Aqua ইত্যাদি পণ্যের ব্যবসা করছে এসিআই। পশু স্বাস্থ্যের জন্য দরকারী ভ্যাক্সিনের কাঁচামাল আমদানি বাধাগ্রস্ত হওয়ায় গত বছর এই সেগমেন্টে প্রবৃদ্ধি কমেছে ৩৫%। এছাড়াও সরকারের পক্ষ থেকে নতুন আরোপিত বিধিনিষেধের কারণে একুয়া সেগমেন্টের প্রবৃদ্ধি কমেছে ১৪%।

ক্রপ কেয়ার সেগমেন্টেও উপস্থিতি রয়েছে এসিআইয়ের। এই সেগমেন্টে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ১০% এর অধিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে এসিআই। কিন্তু বিগত অর্থবছরে অর্থাৎ ২০১৮-২০১৯ এ এই সেগমেন্টে আয় কমেছে ৭%। ফসলের কম দামের কারণে দেশীয় সার শিল্প ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার প্রভাব পড়েছে এসিআইয়ের উপর। তবে এই সেগমেন্টের "রত্ন" ব্র্যান্ডের সার বাজারজাত করে সারের মার্কেটের ২০% শেয়ার ধরতে সক্ষম হয়েছে এসিআই। এছাড়াও বৈচিত্র্য আনতে এসিআই রেডি মিক্স সয়েল বাজারে এনেছে কোম্পানিটি।

এছাড়াও ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস সেগমেন্টে বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ড কোলগেট-এর পণ্য বিক্রিতে প্রায় প্রতি বছরই ১১% এর বেশি প্রবৃদ্ধি থাকে। শিকাগোভিত্তিক কোম্পানি Merisant এর Equal Canderel ব্র্যান্ডের সুইটনারের বিক্রিও বেশ ভাল। বৈচিত্র্য আনতে ২০১৮ সালে সম্পূর্ণ নতুন উপাদানসমৃদ্ধ Equal ব্র্যান্ডের আরেকটি সুইটনার Stevia বাজারে আনে এসিআইএকই বছর প্রিমিয়াম প্রোডাক্ট হিসেবে 'ACI Sandal Soap' বাজারে আনে কোম্পানিটি। এসিআই ও ডাবর ইন্ডিয়ার জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি Asian Consumer Care এর মাধ্যমে ডাবরের বিভিন্ন পণ্য বাংলাদেশে বাজারজাত করছে এসিআই। এছাড়াও Laser ব্র্যান্ডের শেভিং পণ্যের মাধ্যমে ম্যানস গ্রুমিং সেগমেন্টে উপস্থিতি ধরে রেখেছে কোম্পানিটি

Subsidiaries and Brief Financials

এখন এক নজরে দেখে নেয়া যাক এসিআইয়ের সাবসিডিয়ারিগুলোকে -

Subsidiary Ownership
ACI Agrolinks 90%
ACI Biotech 80%
ACI Chemicals 75%
ACI Edible Oils 85%
ACI Foods 95%
ACI Formulations 54%
ACI HealthCare 93%
ACI Logistics 76%
ACI Motors 67%
ACI Pure Flour 95%
ACI Salt 78%
Creative Communication 60%
Infolytx Bangladesh 60%
Premiaflex Plastics 87%


প্রায় প্রতিবছরই নতুন কোন না কোন বিজনেসে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে এসিআই এর রেভিনিউ বাড়লেও ঐসব বিজনেসের রিস্ক এবং ভলাটিলিটি এফেক্ট করেছে কোম্পানির প্রফিটেবিলিটিকে। এর ফলে কোন বছর নীট প্রফিটে বড় গ্রোথ থাকলেও কোন বছরে লসেরও সম্মুখীন হয়েছে কোম্পানিটি। এছাড়াও এসিআইয়ের সব সাবসিডিয়ারি কোম্পানি বা সব বিজনেস সমান লাভজনক না হওয়ায় মূল কোম্পানির প্রফিটে ধারাবাহিকতার বেশ অভাব ছিল। অন্যদিকে অনেক বেশি ব্যাঙ্ক লোননির্ভর হওয়ার কারণে লোনের ইন্টরেস্ট পরিশোধ করতে গিয়ে প্রফিটও বেশ কমে গেছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে। আমাদের পরবর্তী ভিডিওতে এসিআইয়ের সম্মিলিত এবং প্রতিটি সাবসিডিয়ারির প্রফিটেবিলিটি এবং এসিআইয়ের লসের কারণসমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।