শুরুতে সংক্ষেপে কসমেটিক্স এন্ড টয়লেট্রিজ সেক্টরটি নিয়ে কিছু বলা যাক। ২০১৫ সালে এই সেক্টরের টার্নওভার ছিল ১৫০ বিলিয়ন টাকা যা তখনকার জিডিপির প্রায় ১%। ১২% এর বেশি প্রবৃদ্ধির এই সেক্টরে দেশী কোম্পানিগুলোর ডমিনেন্স বেশী। মার্কেট শেয়ারের দিকে থেকে টপ প্লেয়ারগুলোর মধ্যে ইউনিলিভার বাংলাদেশ, কোহিনূর, স্কয়ার, কাশেম গ্রুপ, কল্লোল গ্রুপ, মৌসুমী ইন্ডাস্ট্রিজ এবং ডেল্টা গ্রুপ উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে এই সেক্টরের টার্নওভার ৩.২ বিলিয়ন ডলার বা ২৭০ বিলিয়ন টাকা বলে ধারণা করা হয়।
বিজ্ঞাপণভিত্তিক
প্রমোশনের উপর নির্ভরশীল হওয়ার কারণে কসমেটিক্স এন্ড টয়লেট্রিজ
কোম্পানিগুলোর অপারেটিং এক্সপেন্সের একটা বড় অংশ পণ্যের প্রমোশনের জন্য
বরাদ্দ রাখতে হয়। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের একটি রিপোর্টে
দেখানো হয়, ad share % এর দিক থেকে ১১% শেয়ার নিয়ে টেলিকম সেক্টরের সাথে
যুগ্মভাবে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল কসমেটিক্স এন্ড টয়লেট্রিজ সেক্টর। আগে
কসমেটিক্স কোম্পানিগুলো টিভি বিজ্ঞাপণ ও সেলিব্রিটি এন্ডরসমেন্টের উপর বেশী
নির্ভরশীল থাকলেও বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, এবং জাতীয় ও
আন্তর্জাতিক ইভেন্ট এরেঞ্জমেন্ট কসমেটিক্স কোম্পানিগুলোর প্রমোশনের
উল্লেখযোগ্য অংশ দখল করেছে।
Source: BBF |
Reasons of Fall
- Entering into Garments Business
২০০০-০৯ দশকে কসমেটিকস মার্কেটে যে সন্তোষজনক অবস্থান অর্জন করেছিলো কেয়া, পরের দশকে কেয়ার সেই অবস্থান ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। কসমেটিক্স ব্যবসায় stability এবং শক্ত অবস্থান পাওয়ার আগেই গার্মেন্টস ব্যবসার মত ক্যাপিটাল ইন্টেন্সিভ ব্যবসাতে ঝুঁকে পড়ার কারণে মূল ব্যবসাতে থেকে ফোকাস সরে যায় কোম্পানিটি। ফলে কসমেটিক্স ব্যবসার অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে। ২০১৫ সালে কসমেটিক্স সেক্টরে কোম্পানিটির মার্কেট শেয়ার দাঁড়ায় ৫%। ২০১২-১৩ সালে যেখানে কেয়ার লোকাল সেলস ছিল ২৬০ কোটি, ২০১৭ তে তা প্রায় অর্ধেকে নেমে ১৪০ কোটিতে দাঁড়ায়।
কসমেটিকস পণ্যের বিপুল চাহিদা থাকা সত্ত্বেও কোম্পানির ম্যানেজমেন্টের কসমেটিক্স বিজনেস এক্সপানশনের জন্য কোন কার্যক্রম চোখে পড়ছেনা। টিবিএসের একটি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, কর্মী সংকটের দরুণ দুটি প্রোডাকশন ইউনিটে small scale -এ ডিটারজেন্ট ও সাবান উৎপাদন হচ্ছে।
- Becoming a Distressed company
২০০০ সালের দিকে দেশের গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি যেমন বড় হচ্ছিলো, সেইসাথে পণ্যের চাহিদাও ছিল। এই সুযোগটাই কেয়া নিতে চেয়েছিলো এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যে কয়েকটি ফ্যাক্টরি নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। এসব ফ্যাক্টরি নিমার্ণ ও অন্যান্য বিনিয়োগ বাবদ অনেক বেশি লোন নিয়ে ফেলে কোম্পানিটি। এছাড়াও ২০১০ সালে গ্লোবাল মার্কেটে কটন প্রাইসের ভলাটিলিটির কারণে কোম্পানিটি উচ্চ দামে কটন কিনে। ফলে production cost বেড়ে যায় এবং আশানুরূপ প্রফিট হয়নি। তার উপর ২০১০-১১ সালে কোম্পানিটির প্রায় ৫০০ কোটি টাকার এক্সপোর্ট অর্ডার ক্যান্সেল হয়ে যায়। মূলত ঐ সময় থেকেই কোম্পানিটি লোন পরিশোধ করতে সমস্যার সম্মুখীন হয়। লোন পরিশোধের জন্য বিভিন্ন ইউনিট মার্জ করা, পুজিবাজারে শেয়ার ইস্যু করাসহ নানা কার্যক্রম করলেও শেষ রক্ষা হয়নি। ২০১২ সালে কোম্পানিটির মালিকের নাম বিভিন্ন ব্যাংকের ডিফল্টার লিস্টে চলে আসে। সর্বশেষ প্রাপ্ত ২০১৭-২০১৮ annual report এ কেয়া কসমেটিকস এর প্রায় ১৭০০ কোটি টাকার লোন আউটস্ট্যান্ডিং ছিল। ২০১৯ সালের ২৪ জুন প্রকাশিত টপ ৩০০ জন লোন ডিফল্টারের তালিকায় পুজিবাজারের ১০টি কোম্পানির মধ্যে কেয়ার নাম ছিল এবং ডিফল্টেড লোনের পরিমাণ ছিল প্রায় ১০০ কোটি টাকা। বর্তমানে লোন পরিশোধ স্বাভাবিক রয়েছে বলে বিভিন্ন ব্যাংক সূত্র হতে জানা যায়।
- Lack of enough segmentation
গত দশকে কেয়া তাদের প্রোডাক্ট নিয়ে কোন কাজ করেনি। তাদের প্রোডাক্ট ক্যাটাগরি আগেরগুলোই রয়েছে এবং ঐসব ক্যাটাগরিতে আগের প্রোডাক্টগুলোই উৎপাদিত হচ্ছে সীমিৎ আকারে। আগের সেই বল সাবান, ডিটারজেন্ট, শ্যাম্পু, বিউটি সোপ-ই এখনো বিক্রি হচ্ছে তাও কম পরিমাণে। করা হয়নি বয়সভিত্তিক বা লিংগভিত্তিক কোন সেগমেন্টেশনও। বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো এবং ভাল কসমেটিক্স ব্র্যান্ডগুলি পুরুষ ও মহিলা কেন্দ্রিক পণ্য ম্যানুফ্যাকচার করে unisex product positioning করেছে এবং তাদের মার্কেট শেয়ার বাড়িয়েছে। কেয়ার সেরকম কোন কার্যক্রম দেখা যায়নি।
- Low Share of Voice
কোন কোম্পানির Share of voice হল ঐ কোম্পানির advertising ও marketing / ঐ কোম্পানির সেক্টরের মোট advertising ও marketing। প্রোডাক্ট মার্কেটিং এন্ড প্রমোশনাল ইকোসিস্টেম গত পাঁচ বছরে অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং একটা বড় অংশ দখল করেছে। আগের সেলিব্রিটি Endorsement-ও এখন অনেক বেশি সোশ্যাল মিডিয়া নির্ভর। এছাড়া traditional TVC, Local ও International event স্পন্সরের মাধ্যমে প্রমোশনতো আছেই। সব মিলিয়ে একটি বা দুইটি মাধ্যমের উপর নির্ভরশীল না হয়ে ৩৬০ ডিগ্রী বা TTL marketing strategy-ই ফলো করছে কোম্পানিগুলো। যেমন লাক্স পুরোনো ও নতুন টিভিসি প্রচারের পাশাপাশি বিভিন্ন ড্রামা সিরিয়ালের টাইটেল স্পন্সরশীপ, লাক্স- চ্যানেল আই সুপারস্টার-এর স্পন্সরশীপ, বিলবোর্ড মার্কেটিং, নিউজপেপার এড - ইত্যাদির মাধ্যমে তাদের প্রোডাক্ট প্রমোশন করে। এছাড়াও ডেটলের গ্লোবাল হ্যান্ডওয়াশিং ডে উৎযাপন, লাইফবয়ের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে অন্তর্ভুক্তি করার ঘটনা না বললেই নয়। এদিক থেকে আশ্চর্য ব্যতিক্রম কেয়া। কোম্পানিটি সবসময় টিভিসি ভিত্তিক প্রমোশনকে প্রাধান্য দিয়ে এলেও ২০১৬ সালের পর কেয়ার কোন টিভিসি প্রচারিত হয়নি। ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান "ইত্যাদি"র স্পন্সর হিসেবে এখনো কাজ করছে কেয়া, কিন্তু আমরা সবাই জানি জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে ইত্যাদির অবস্থান আজ কোথায়।
- Absence of positioning
প্রতিষ্ঠার বছরগুলোতে সব ধরণের কাস্টমারদেরই টার্গেট করেছিল কেয়া। মফস্বল ও গ্রামের মানুষদের আকৃষ্ট করতে কম্পিটিটরদের তুলনায় ৬-৭% দাম কমও রাখতো কোম্পানিটি। পরবর্তী সময়ে product positioning ঠিকমত করতে পারেনি কোম্পানিটি। বড় কোম্পানিগুলো যেমন তাদের প্রোডাক্টের সঠিক পজিশনিং-এর মাধ্যমে তাদের প্রাইসিং স্ট্র্যাটেজি ঠিক করেছে, কেয়া সেখানে "Just Another Beauty Soap" হিসেবে মার্কেটে থেকে গেছে। অন্য সোপ ম্যানুফ্যাকচারাররা বিউটি সোপের পাশাপাশি এন্টিএজিং, আয়ুর্বেদিক প্রোডাক্টগুলোতেও সমান ট্র্যাকশন অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। সেখানে কেয়ার রেভিনিউ বিউটি সোপ কেন্দ্রিকই রয়ে গেছে বছরের পর বছর।
- Weak Product Distribution
Product distribution এর ক্ষেত্রে Traditional model-ই follow করে আসছে কেয়া। আর তা হল - Manufacturer >>>> Wholesaler >>> Retailer >> Consumer। অর্থাৎ অন্যান্য কসমেটিক্স কোম্পানিগুলোর মত Intermediary গুলোর উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। আবার ডিমান্ড অনুযায়ী প্রোডাক্টের অপ্রতুলতা, এবং লো মার্জিনের কারণে wholesaler ও রিটেইলারদের কেয়ার প্রোডাক্টের ব্যাপারে আগ্রহ কম। অন্যান্য কম্পানিগুলো তাদের wholesaler ও রিটেইলারদের পর্যাপ্ত ইনসেন্টিভ প্রদানের মাধ্যমে ভাল রিলেশনশীপ মেইন্টেইন করে। এক্ষেত্রে বেশ কয়েক বছর ধরে কেয়া বেশ উদাসীন।
Keya Cosmetics in Share Market
শেয়ারবাজারে কেয়ার অবস্থান সন্তোষজনক নয়। ২০১০ সালের পর থেকে কোম্পানিটি কোন ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেয়নি। ২০১১ সালে কেয়া রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ১০০ কোটি টাকা উত্তোলন করে লোন পরিশোধ করার জন্য। লোন পরিশোধ করার জন্য মালিকপক্ষ বিভিন্ন সময়ে শেয়ার বিক্রিও করেছে। কোম্পানিটির স্পন্সর ডিরেক্টরদের শেয়ারহোল্ডিং এই বছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ছিল ৪৬%, যা ২০১৭ সালে ছিল ৬৩%।
করোনাভাইরাসের কারণে যেখানে দেশী ও বিদেশী হাইজিন ও টয়লেট্রিজ প্রোডাক্ট ম্যানুফ্যাকচারাররা তাদের পণ্যের উচ্চ চাহিদার কারণে প্রফিটে প্রবৃদ্ধি দেখছে, সেখানে কিছু ব্যতিক্রমের মধ্যে একটি হল কেয়া কসমেটিক্স। ২০১৭-১৮ সালের পর কোন annual report প্রকাশিত হয়নি, প্রকাশিত হয়নি কোন quarterly reportও। গত দুই বছর ধরে AGM বন্ধ থাকার পর গত অক্টোবর মাসে ২২তম AGM ক্করে কোম্পানিটি। এছাড়াও সম্প্রতি কেয়ার রেভিনিউ ও প্রফিট রিপোর্টিং নিয়ে তদন্ত করছে বাংলাদেশের ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং রেগুলেটরি বডি Financial Reporting Council (FRC)।
Reference:
- https://www.coursehero.com/file/p7oka8c/Chapter-2-Organizational-Overview-21-Introduction-The-Keya-Cosmetics-Ltd-is-one/
- https://medium.com/@milky.mahmud/bangladeshs-booming-beauty-market-2c98236647b6
- https://www.dhakatribune.com/opinion/special/2019/01/26/the-economy-of-the-fairness-industry
- https://bbf.digital/wp-content/uploads/2015/10/20.jpg?189db0&189db0
- https://bbf.digital/cosmetics-toiletries-industry
- https://docplayer.net/34262676-A-report-on-cosmetic-toiletries-industries-of-bangladesh-mansur-ahamed-ph-d-research-department-jbbc-corporation.html
- https://www.globalcosmeticsnews.com/local-players-now-dominate-in-booming-bangladeshi-cosmetics-and-toiletries-market/
- https://www.researchgate.net/publication/326468905_Bangladesh's_Dynamic_Toilet_Soap_Market_The_Case_of_Keya
- http://milonanjel.blogspot.com/2008/07/advertising-and-promotional-strategy-of.html?m=1
- https://www.slideshare.net/ontoromi/analyzing-the-strategic-hr-environment-analysis-of-keya-cosmetics-ltd-under-keya-knit-composite-division
- https://www.daily-sun.com/arcprint/details/401521/Names-of-300-loan-defaulters-revealed-/2019-06-23
- https://www.termpaperwarehouse.com/essay-on/Report-On-Keya-Super-Beauty-Soap/36955
- company website, annual report
Informative informations
ReplyDelete