আগের দুটি লেখার লিঙ্কঃ
যথারীতি ফাটাফাটি ছিল Sacred Games - সিজন ২। ইন্সপেক্টর সারতাজ সিং এর চরিত্রে সাইফ আলী খানের আরো পরিণত অভিনয়, গুরুজীর চরিত্রের পরিপূর্ণ বিকাশের সাথে অন্যান্য চরিত্রগুলোর জাস্টিফাইড ইম্পরট্যান্স সিরিজটির দ্বিতীয় সিজনকেও উপভোগ্য করেছে। আর গাইতোন্ডের চরিত্রে নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী বরাবরের মত অসাধারণ ছিলেন। কিন্তু প্রথম সিজন যেখানে রাজনীতি, সমাজনীতি, ধর্মীয় উগ্রতার কুৎসিত রূপ, র-আইএসআই এর দ্বন্দ্ব, গাইতোন্ডের উত্থান, ব্যক্তিগত জীবনের মোড়, প্রেম-বিচ্ছেদ-সেক্স-ড্রাগস, সারতাজ সিং-এর ব্যক্তিগত জীবনের টানাপোড়েন, তার সাথে গাইতোন্ডের জুড়ে যাওয়া, চরিত্রগুলোর পৌরাণীক রেফারেন্স - সব মিলিয়ে অসাধারণ এক ককটেল ছিলো, দ্বিতীয় সিজন সেখানে কিছুটা একঘেয়ে, একমুখী।
প্রথম সিজনের পর্বগুলোর নাম হিন্দু মিথোলজির কিছু চরিত্রের নামানুসারে দেয়া। এবারে কিছুটা বৈচিত্র্য ছিলো রেফারেন্সের দিক থেকে, সেগুলো নিয়েই এই লেখা।
পর্ব-১ মৎস্য (Matsya): মৎস্য মানে মাছের সাথে এনালজি এখানে একটু অন্যরকম। সনাতন বা হিন্দু ধর্মে ভগবানের (God) তিনটি রূপ সম্পর্কে উল্লেখ আছে - ব্রহ্মা (Brahma), বিষ্ণু (Vishnu) ও শিব (Shiva)। আর সৃষ্টির শুরু হতে এখন পর্যন্ত সময়কালকে চারটি যুগে ভাগ করা হয়েছে - সত্য (Satya), ত্রেতা (treta), দ্বাপর (Dvappar) ও কলিযুগ (Kaliyug)। একেকটি যুগের ব্যাপ্তিকাল লক্ষ বছর। Sacred Games এর এই সিজনে এই চার যুগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে অনেকবার। বিশ্বাস করা হয় ভগবানের দ্বিতীয় রূপ, মানে বিষ্ণু, দশবার দশটি ভিন্ন রুপে বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীতে এসেছিলেন বা আসবেন। এর মধ্যে প্রথম রূপ হল মৎস্য। সৃষ্টির শুরুতে নাকি এক ভয়ানক বন্যা হয় - তাতে ভগবান মৎস্যরূপে এসে প্রাণীকুলকে রক্ষা করেন।
এই পর্বসহ আরো ১/২টা পর্বে মৎস্য বা মাছের উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথম পর্বের শুরুতে দেখা যায় গাইতোন্ডে একটি ভাসমান জেলে বন্দী; তাকে খাবার হিসেবে শুধু মাছ দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ শুধু মাছ খেয়ে সে বেঁচে আছে। প্রথম পর্বটির আগানোর সাথে সাথে মাছের সাথে নামকরণের মেটাফরিকাল লিংকও পাওয়া যায়। গাইতোন্ডেকেও তার চিরচেনা শহর থেকে দূরে কেনিয়াতে নিয়ে আসা হয়। সেও নিজেকে চেনা পরিবেশের বাইরে থাকা মাছের মত আবিষ্কার করে ও বুঝতে পারে বেঁচে থাকতে হলে তাকে এখানে নতুন সাম্রাজ্য বানাতে হবে। হিন্দু মিথোলজির কোথাও কোথাও মৎস্য অবতার ও ব্রহ্মাকে এক বা অভিন্ন হিসেবে উল্লেখ করা হয়। গাইতোন্ডেও পরবর্তীতে গোচি (Gochi, একটি ড্রাগ, যা গুরুজী তার শিষ্যদের দিতেন) খেয়ে হাই হয়ে নিজেকে ব্রহ্মা মনে করা শুরু করে। এছাড়া গুরুজীও তার সভায় মাছ থেকে মানুষের বিবর্তন হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। আর বিভিন্ন গবেষণায় মানুষের শরীরের ভিতরের গঠন কাঠামোর সাথে মাছের গঠন কাঠামোর মিল পাওয়া গেছে তা আমরা অনেকে জানি। মাছ এবং মানুষের বিবর্তন প্রসঙ্গে MinuteEarth এর নিচের ভিডিওটি দেখতে পারেন।
Which fish did we evolve from: https://www.youtube.com/watch?v=W2ojuZ_s4z8
পর্ব-২ সিদুরী (Siduri): প্রাচীন মেসোপটেমিয়ান সভ্যতার টিকে যাওয়া সাহিত্যকর্মগুলোর মধ্যে 'গিলগামেশের মহাকাব্য'(The Epic of Gilgamesh) অন্যতম। অনেকের মতে এটা পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো সাহিত্যকর্ম। ইউফ্রেটিস নদীর তীরে গড়ে উঠা সুমেরীয় সভ্যতার এক শহরের নাম ছিল উরুক, যার রাজা ছিল গিলগামেশ। এহেন কোন খারাপ কাজ নাই, যে মামা করেনাই। সিরিয়াল রেপিস্ট হিসেবে কুখ্যাত ছিল, তার অধীনে প্রজারাও ছিল অসুখী। তার মা ছিল দেবী আর বাবা ছিল আমজনতা। সেই হিসেবে এক বা দুই তৃতীয়াংশ (do your math 😄) দেবতা ছিল গিলগামেশ। তো কিছু অংশ মানুষ থাকার কারণে সে ছিল নশ্বর, যেটা অবশ্যই তার পছন্দ হইনাই। তো মামা যখন অমরত্বের খোঁজে বের হয়, তার সাথে দেখা হয় সিদুরীর। কোন কোন ইতিহাসবিদ সিদুরীকে একজন প্রজ্ঞাশীল নারী হিসেবে উল্লেখ করেন আবার কেউ কেউ উল্লেখ করেন জ্ঞ্যান এবং বিয়ারের (Beer) দেবী হিসেবে (হ্যাঁ, দুইটা ব্যাপার কেম্নে মিলাইছে আমি জানিনা 😐)। তো এই সিদুরী গিলগামেশকে অমরত্বের পিছনে না ছুটে সহজ সরল জীবনযাপনের মাধ্যমে সুখ খুঁজে নিতে সাহায্য করে।
এক্ষেত্রে কয়েকটা এনালজি দাঁড় করানো যেতে পারে। সিরিজে বাত্যা (Batya Abelman - Kalki Koechin)-কে এপিক অফ গিলগামেশ থেকে সরাসরি কোট করতে দেখা যায়। বাত্যা ছিল সারতাজ সিংয়ের (সাইফ আলী খান) স্পিরিচুয়াল গাইড, যার সাথে সিদুরীকে মেলানোও যেতে পারে। এছাড়াও গাইতোন্ডে যখন নিজের প্রভাব, ক্ষমতা ইত্যাদি নিয়ে অবসেসড ছিল, তখন সারতাজ সিংয়ের বাবা তাকে জীবনকে সহজভাবে দেখতে বলে এবং সাধারণ জিনিসের মধ্যে সুখ খুঁজে নিতে বলে। আর এভাবেই গুরুজীর সন্ধান পায় গাইতোন্ডে। The Epic of Gilgamesh নিয়ে নিচের ভিডিওটি দেখা যেতে পারে -
The Epic of Gilgamesh: https://www.youtube.com/watch?v=sWppk7-Mti4
পর্ব-৩ আপাসমারা (Apasmara): হিন্দু মিথোলজি অনুসারে আপাসমারা হল অজ্ঞ্যানতা, ইগো, ঔদ্ধ্যতের দেবতা (Demon of Ignorance - opposite of Knowledge, Ego & Arrogance)। হিন্দু পুরাণগুলায় যেমন পাইকারী হারে অমরত্বের বর দেয়ার উল্লেখ আছে 😃, সেই হিসেবে আপাসমারাও সেই বর পায়। তারপর সে ভগবান শিবের (পর্ব একের বর্ণনায়) স্ত্রী পার্বতীর সব শক্তি ধ্বংস করে দেয় এবং শিবের বিরাগভাজন হয়। পরে শিব আপাস্মারার গুহায় এসে তার বিখ্যাত 'নটরাজ' রূপ ধারণ করেন এবং তান্ডব নৃত্য শুরু করেন। পরে শিব আপাস্মারাকে ডান পায়ে পিষে ফেলেন ও আপাস্মারা তার কাছে ক্ষমা চায়।
Source: GQ |
এই পর্বসহ আরো ১/২টা পর্বে মৎস্য বা মাছের উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথম পর্বের শুরুতে দেখা যায় গাইতোন্ডে একটি ভাসমান জেলে বন্দী; তাকে খাবার হিসেবে শুধু মাছ দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ শুধু মাছ খেয়ে সে বেঁচে আছে। প্রথম পর্বটির আগানোর সাথে সাথে মাছের সাথে নামকরণের মেটাফরিকাল লিংকও পাওয়া যায়। গাইতোন্ডেকেও তার চিরচেনা শহর থেকে দূরে কেনিয়াতে নিয়ে আসা হয়। সেও নিজেকে চেনা পরিবেশের বাইরে থাকা মাছের মত আবিষ্কার করে ও বুঝতে পারে বেঁচে থাকতে হলে তাকে এখানে নতুন সাম্রাজ্য বানাতে হবে। হিন্দু মিথোলজির কোথাও কোথাও মৎস্য অবতার ও ব্রহ্মাকে এক বা অভিন্ন হিসেবে উল্লেখ করা হয়। গাইতোন্ডেও পরবর্তীতে গোচি (Gochi, একটি ড্রাগ, যা গুরুজী তার শিষ্যদের দিতেন) খেয়ে হাই হয়ে নিজেকে ব্রহ্মা মনে করা শুরু করে। এছাড়া গুরুজীও তার সভায় মাছ থেকে মানুষের বিবর্তন হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। আর বিভিন্ন গবেষণায় মানুষের শরীরের ভিতরের গঠন কাঠামোর সাথে মাছের গঠন কাঠামোর মিল পাওয়া গেছে তা আমরা অনেকে জানি। মাছ এবং মানুষের বিবর্তন প্রসঙ্গে MinuteEarth এর নিচের ভিডিওটি দেখতে পারেন।
Which fish did we evolve from: https://www.youtube.com/watch?v=W2ojuZ_s4z8
পর্ব-২ সিদুরী (Siduri): প্রাচীন মেসোপটেমিয়ান সভ্যতার টিকে যাওয়া সাহিত্যকর্মগুলোর মধ্যে 'গিলগামেশের মহাকাব্য'(The Epic of Gilgamesh) অন্যতম। অনেকের মতে এটা পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো সাহিত্যকর্ম। ইউফ্রেটিস নদীর তীরে গড়ে উঠা সুমেরীয় সভ্যতার এক শহরের নাম ছিল উরুক, যার রাজা ছিল গিলগামেশ। এহেন কোন খারাপ কাজ নাই, যে মামা করেনাই। সিরিয়াল রেপিস্ট হিসেবে কুখ্যাত ছিল, তার অধীনে প্রজারাও ছিল অসুখী। তার মা ছিল দেবী আর বাবা ছিল আমজনতা। সেই হিসেবে এক বা দুই তৃতীয়াংশ (do your math 😄) দেবতা ছিল গিলগামেশ। তো কিছু অংশ মানুষ থাকার কারণে সে ছিল নশ্বর, যেটা অবশ্যই তার পছন্দ হইনাই। তো মামা যখন অমরত্বের খোঁজে বের হয়, তার সাথে দেখা হয় সিদুরীর। কোন কোন ইতিহাসবিদ সিদুরীকে একজন প্রজ্ঞাশীল নারী হিসেবে উল্লেখ করেন আবার কেউ কেউ উল্লেখ করেন জ্ঞ্যান এবং বিয়ারের (Beer) দেবী হিসেবে (হ্যাঁ, দুইটা ব্যাপার কেম্নে মিলাইছে আমি জানিনা 😐)। তো এই সিদুরী গিলগামেশকে অমরত্বের পিছনে না ছুটে সহজ সরল জীবনযাপনের মাধ্যমে সুখ খুঁজে নিতে সাহায্য করে।
Source: GQ |
The Epic of Gilgamesh: https://www.youtube.com/watch?v=sWppk7-Mti4
পর্ব-৩ আপাসমারা (Apasmara): হিন্দু মিথোলজি অনুসারে আপাসমারা হল অজ্ঞ্যানতা, ইগো, ঔদ্ধ্যতের দেবতা (Demon of Ignorance - opposite of Knowledge, Ego & Arrogance)। হিন্দু পুরাণগুলায় যেমন পাইকারী হারে অমরত্বের বর দেয়ার উল্লেখ আছে 😃, সেই হিসেবে আপাসমারাও সেই বর পায়। তারপর সে ভগবান শিবের (পর্ব একের বর্ণনায়) স্ত্রী পার্বতীর সব শক্তি ধ্বংস করে দেয় এবং শিবের বিরাগভাজন হয়। পরে শিব আপাস্মারার গুহায় এসে তার বিখ্যাত 'নটরাজ' রূপ ধারণ করেন এবং তান্ডব নৃত্য শুরু করেন। পরে শিব আপাস্মারাকে ডান পায়ে পিষে ফেলেন ও আপাস্মারা তার কাছে ক্ষমা চায়।
Nataraja form of Shiva. Source: Scoopwhoop |
সিরিজের তিন নং পর্বে দেখানো হয়, গাইতোন্ডে কেনিয়ায় নির্বাসিত হওয়ার পর ভারতে ফিরার জন্য এবং নিজের আগের ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠে। এখানে আপাস্মারার রেফারেন্স টানার কারণ হিসেবে গাইতোন্ডের ঔদ্ধ্যত ও সে যে নিজেকে অমর বলে দাবি করে আসে - এগুলোকে বলা যেতে পারে। এরপর সে গুরুজীর শরণাপন্ন হয় এবং (সোজা বাংলায়) ঠান্ডা হয়।
পর্ব-৪ বারদো (Bardo): বৌদ্ধ ধর্মে বারদো থোদল নামের এক বইয়ের উল্লেখ আছে (Bardo Thodol - A Tibetan Book of Dead) - যেটার মূল থিম হল বারদো, যা কিনা মৃত্যু ও পুনর্জন্মের অন্তর্বতীকালীন সময়। সিরিজে গুরুজী বারবার গাইতোন্ডেকে বলে যে তাকে আগের গাইতোন্ডের মৃত্যু ঘটাতে হবে এবং মোক্ষ (চূড়ান্ত মুক্তি) প্রাপ্তির দিকে এগুতে হবে।
পর্ব-৫ বিকর্ণ (Vikarna): রামায়ণ ও মহাভারত প্রাচীন ভারতে সৃষ্ট দুটি উল্লেখযোগ্য মহাকাব্য। মহাভারতে দুই বংশের বংশধরদের মধ্যকার অন্তর্কোন্দল, পরবর্তীতে তা যুদ্ধে রূপ নেয়া, যুদ্ধ শেষে রাজ্য দখল, রাজ্য বিস্তার ইত্যাদির বর্ণনা দেয়া হয় এবং একে একে সবার মৃত্যুর মাধ্যমে মহাকাব্যটি শেষ হয়। মহাভারতে যেমন প্রাচীন ভারতের যুদ্ধনীতি, সমাজনীতি, ধর্মনীতি সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়েছে তেমনি জীবনের সাথে মৃত্যু ও মৃত্যুপরবর্তী সময়ের যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে। মহাভারতেই বর্ণিত হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মগ্রন্থ "শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা", সংক্ষেপে গীতা।
মহাভারতে বর্ণিত কুরু বংশের দুইটি পরিবার - কৌরব ও পান্ডব। কৌরবরা ছিল একশ রাজপুত্র ও এক রাজকন্যা এবং পান্ডবরা ছিল পাঁচভাই, যাদেরকে পঞ্চপান্ডব বলা হতো। একশ কৌরব রাজপুত্রের মধ্যে তৃতীয় ছিল বিকর্ণ, প্রথম দুজন যথাক্রমে দুর্যোধন ও দুঃশাসন। মহাভারতে কৌরবদের এন্টাগনিস্ট এবং পান্ডবদের প্রোটাগনিস্ট হিসেবে দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ কৌরবদের অত্যাচারী, লম্পট, নারীলিপ্সুসহ আরো যত ধরণের ট্যাগ দেয়া সম্ভব সবই দেয়া হয়েছে।
পঞ্চপান্ডবদের স্ত্রী, দ্রৌপদির বস্ত্রহরণ মহাভারতের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। পান্ডবরা পাশা খেলায় নিজেদের স্ত্রী দ্রৌপদিকে বাজি ধরে বসে এবং হেরে যায়। সুযোগ পেয়ে কৌরবরা কূলবধূ দ্রৌপদির চরম অপমান করে তার বস্ত্রহরণের মাধ্যমে। শুধু বিকর্ণ এই অপমানের বিরোধিতা করে এবং এই নীচ কাজ করা থেকে বিরত থাকে।
সিরিজে দেখানো হয়েছে, চারদিকের চলমান অস্থিরতার মধ্যে গুরুজী সবাইকে সঠিকপথে আনার জন্য চেষ্টা করতে থাকে, আর এই ব্যাপারটা বোঝাতে গিয়ে সারতাজ সিংয়ের বাবা গিলবাগ সিং গুরুজীকে বিকর্ণের সাথে তুলনা করে। এছাড়াও পরবর্তীতে সারতাজ এবং গাইতোন্ডে যখন গুরুজীর পরিকল্পনার কথা জেনে যায় তখন তারা দুজনই তার বিপক্ষে চলে যায়। তাদের এই স্ট্যান্ডপয়েন্ট ও পরবর্তী কার্যক্রমকেও দ্রৌপদির বস্ত্রহরণের সময় বিকর্ণের কার্যক্রমের সাথে তুলনা করা যেতে পারে।
Death & Afterlife in Buddhism. Source: medium.com |
পর্ব-৫ বিকর্ণ (Vikarna): রামায়ণ ও মহাভারত প্রাচীন ভারতে সৃষ্ট দুটি উল্লেখযোগ্য মহাকাব্য। মহাভারতে দুই বংশের বংশধরদের মধ্যকার অন্তর্কোন্দল, পরবর্তীতে তা যুদ্ধে রূপ নেয়া, যুদ্ধ শেষে রাজ্য দখল, রাজ্য বিস্তার ইত্যাদির বর্ণনা দেয়া হয় এবং একে একে সবার মৃত্যুর মাধ্যমে মহাকাব্যটি শেষ হয়। মহাভারতে যেমন প্রাচীন ভারতের যুদ্ধনীতি, সমাজনীতি, ধর্মনীতি সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়েছে তেমনি জীবনের সাথে মৃত্যু ও মৃত্যুপরবর্তী সময়ের যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে। মহাভারতেই বর্ণিত হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মগ্রন্থ "শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা", সংক্ষেপে গীতা।
মহাভারতে বর্ণিত কুরু বংশের দুইটি পরিবার - কৌরব ও পান্ডব। কৌরবরা ছিল একশ রাজপুত্র ও এক রাজকন্যা এবং পান্ডবরা ছিল পাঁচভাই, যাদেরকে পঞ্চপান্ডব বলা হতো। একশ কৌরব রাজপুত্রের মধ্যে তৃতীয় ছিল বিকর্ণ, প্রথম দুজন যথাক্রমে দুর্যোধন ও দুঃশাসন। মহাভারতে কৌরবদের এন্টাগনিস্ট এবং পান্ডবদের প্রোটাগনিস্ট হিসেবে দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ কৌরবদের অত্যাচারী, লম্পট, নারীলিপ্সুসহ আরো যত ধরণের ট্যাগ দেয়া সম্ভব সবই দেয়া হয়েছে।
পঞ্চপান্ডবদের স্ত্রী, দ্রৌপদির বস্ত্রহরণ মহাভারতের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। পান্ডবরা পাশা খেলায় নিজেদের স্ত্রী দ্রৌপদিকে বাজি ধরে বসে এবং হেরে যায়। সুযোগ পেয়ে কৌরবরা কূলবধূ দ্রৌপদির চরম অপমান করে তার বস্ত্রহরণের মাধ্যমে। শুধু বিকর্ণ এই অপমানের বিরোধিতা করে এবং এই নীচ কাজ করা থেকে বিরত থাকে।
সিরিজে দেখানো হয়েছে, চারদিকের চলমান অস্থিরতার মধ্যে গুরুজী সবাইকে সঠিকপথে আনার জন্য চেষ্টা করতে থাকে, আর এই ব্যাপারটা বোঝাতে গিয়ে সারতাজ সিংয়ের বাবা গিলবাগ সিং গুরুজীকে বিকর্ণের সাথে তুলনা করে। এছাড়াও পরবর্তীতে সারতাজ এবং গাইতোন্ডে যখন গুরুজীর পরিকল্পনার কথা জেনে যায় তখন তারা দুজনই তার বিপক্ষে চলে যায়। তাদের এই স্ট্যান্ডপয়েন্ট ও পরবর্তী কার্যক্রমকেও দ্রৌপদির বস্ত্রহরণের সময় বিকর্ণের কার্যক্রমের সাথে তুলনা করা যেতে পারে।
Dice & disrobing of Draupadi. Source: Storypick |
পর্ব-৬ আজরাইল (Azrael): ইসলাম, খ্রিস্টান ও ইহুদি ধর্মে আজরাইলের উল্লেখ আছে মৃত্যুদ্যূত (Angel of Death) হিসেবে। ১২ জন আর্কএঞ্জেলের (Archangel) মধ্যে আজরাইল অন্যতম।আজরাইলের সাথে একটা স্ক্রল বা পার্চমেন্ট থাকে যার মাধ্যমে মানুষের ভাগ্য নির্ধারিত হয়। ডিসি কমিকস এবং লুসিফারের কমিক্স ও টিভি শোতেও আজরাইলের উল্লেখ আছে বা দেখানো হয়েছে।
Lucifer 3x25: Lucifer Meets Azrael: https://www.youtube.com/watch?v=pnW4iXN9Gv8
Sacred Games - এর এই পর্বে গাইতোন্ডে মুম্বাইয়ে পৌঁছায়, এবং তার সাথে থাকে গুরুজীর নিউক্লিয়ার এটাকের পরিকল্পনার "বাইবেল"। গাইতোন্ডে এখানে আজরাইলের সাথে তুলনীয় এবং তার সাথের "বাইবেল" আজরাইলের স্ক্রলের সাথে।
পর্ব-৭ টোরিনো (Torino): সিরিজের এই পর্বের নামকরণ কিছুটা কনফিউজিং। রেফারেন্স হিসেবে ইতালির তুরিন (Turin) নগরীর কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। তুরিন ইতালির উত্তর-পশ্চিম দিকের একটি ঐতিহাসিক নগরী, আর মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে "পো" ও "ডোরা" (Po and Dora Riparia) নামক দুইটি নদী।
তুরিন শহর। Source: vacanzzitiva.com |
সিরিজের এই পর্যায়ে এসে দেখা যায়, সারতাজ ও গাইতোন্ডে উভয়েই তাদের ব্যক্তিত্ব, তাদের মনন, চিন্তা, মানসিকতা নিয়ে চরম দ্বন্দ্বে ভুগছে। তাদের চরিত্রের ও ব্যক্তিত্বের দ্বৈততার এই দ্বন্দ্বকে দুই নদী ঘেঁষে বেড়ে উঠা তুরিন নগরীর সাথে তুলনা করা যায়।
পর্ব-৮ র্যাডক্লিফ (Radcliffe): শুধু সিরিজের শেষ পর্ব হিসেবে নয়, পর্বের শেষে ক্লিফহ্যাঙ্গার এবং নামকরণের জন্যও এই পর্বটি গুরুত্বপূর্ণ। এই পর্বটির নামকরণ কোন পৌরাণিক চরিত্র বা ধর্মীয় রেফারেন্স অনুসারে নয়, একেবারে সত্য ঘটনানুসারে করা হয়েছে।
১৯৪৭ সালে অবিভক্ত ভারতে ব্রিটিশ শাসনামলের প্রায় শেষের দিকে লর্ড মাউন্টব্যাটেন তৎকালীন কংগ্রেসের প্রধান জহরলাল নেহেরু ও মুসলীম লীগের প্রধান মুহম্মদ আলী জিন্নাহর সাথে আলোচনা করে দেশ বিভাগের প্রস্তুতি নেন। আর সীমান্ত ভাগের দায়িত্ব দেয়া হয় এক ব্রিটিশ আইনজীবি সিরিল র্যাডক্লিফকে। মি. র্যাডক্লিফ ব্রিটেনে নামকরা আইনজীবি হলেও ভারতে কখনো কাজ করেননি; এমনকি (তার ভাষ্য মতে) ভারতের ভৌগলিক এবং রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে তিনি খুব বেশি জানতেননা এবং জানতে আগ্রহীও ছিলেননা। আইন রিলেটেড কাজের বাইরেও তিনি খুব বেশি কাজ করেননি। এমন একজন আনকোরা ব্যক্তির উপর ভারত ভাগের মত বিশাল দায়িত্ব দেয়ার যুক্তি মেলানো যায়না। তার উপর তাকে সময় দেয়া হয় মাত্র ৫ দিন। ফলে নেহেরু, জিন্নাহ ও মাউন্টব্যাটেনের সাথে অনেকটা তাড়াহুড়ো করে আলোচনা শেষে, ধর্মের ভিত্তিতে ভারতের মানচিত্রকে ব্যবচ্ছেদ করতে হয় র্যাডক্লিফকে। অবিভক্ত ভারত ভাগের জন্য দুই দেশের সীমান্তের উপর টানা এই রেখাকে "র্যাডক্লিফ লাইন" (Radclliffe partition line) বলা হয়।
"র্যাডক্লিফ লাইন" শুধু একটা লাইন বা রেখা না; দুই দেশের এবং বৈশ্বিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট চিন্তা করলে এটির প্রভাব আজো আছে। ধর্মের ভিত্তিতে সীমান্ত ভাগ করে র্যাডক্লিফ সাহেব তার দায়িত্ব শেষ করে দিলেও, এই সীমান্তরেখা যে কত লক্ষ মানুষের প্রাণহানীর, সম্ভ্রমহানীর এবং ভিটামাটি ছাড়ার ইতিহাস বহন করছে তার ইয়ত্তা নেই। পরবর্তীতে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে সীমান্তে অস্থিরতা কমানোসহ নানা পদক্ষেপ নেয়ার কথা থাকলেও তা আর হয়ে উঠেনি। বরং কাশ্মির ইস্যু নিয়ে দুই দেশে বারবার যুদ্ধে জড়িয়েছে , যা এখনো বিদ্যমান।
সিরিজের শেষ পর্বের শুরুতেই ফ্ল্যাশব্যাকে দেশভাগের সময়কার অস্থিরতা, সংঘর্ষ ইত্যাদির দৃশ্য দেখানো হয়। কিভাবে সারতাজের পরিবার ভারতভাগের সময় আলাদা হয়ে যায় সেটাও দেখানো হয় এই ফ্ল্যাশব্যাকে।
সব মিলিয়ে প্রথম সিজনের অসাধারণ প্লটের উপর ভিত্তি করে যেখানে ভাল কিছুর আশায় ছিলো সবাই, সেখানে শেষ পর্যন্ত দেশ বিভাগের সময় থেকে মানুষের মধ্যে চেপে রাখা ক্ষোভের প্রকাশ আর থানোস দাদুর আধা জনসংখ্যা নির্মূল নীতির মিশেল নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে দর্শকদের। তবে শেষে রেখে যাওয়া ক্লিফহ্যাঙ্গারের জন্য আরেকটি টানটান উত্তেজনায় ভরা সিজন আশা করা যেতেই পারে।
১৯৪৭ সালে অবিভক্ত ভারতে ব্রিটিশ শাসনামলের প্রায় শেষের দিকে লর্ড মাউন্টব্যাটেন তৎকালীন কংগ্রেসের প্রধান জহরলাল নেহেরু ও মুসলীম লীগের প্রধান মুহম্মদ আলী জিন্নাহর সাথে আলোচনা করে দেশ বিভাগের প্রস্তুতি নেন। আর সীমান্ত ভাগের দায়িত্ব দেয়া হয় এক ব্রিটিশ আইনজীবি সিরিল র্যাডক্লিফকে। মি. র্যাডক্লিফ ব্রিটেনে নামকরা আইনজীবি হলেও ভারতে কখনো কাজ করেননি; এমনকি (তার ভাষ্য মতে) ভারতের ভৌগলিক এবং রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে তিনি খুব বেশি জানতেননা এবং জানতে আগ্রহীও ছিলেননা। আইন রিলেটেড কাজের বাইরেও তিনি খুব বেশি কাজ করেননি। এমন একজন আনকোরা ব্যক্তির উপর ভারত ভাগের মত বিশাল দায়িত্ব দেয়ার যুক্তি মেলানো যায়না। তার উপর তাকে সময় দেয়া হয় মাত্র ৫ দিন। ফলে নেহেরু, জিন্নাহ ও মাউন্টব্যাটেনের সাথে অনেকটা তাড়াহুড়ো করে আলোচনা শেষে, ধর্মের ভিত্তিতে ভারতের মানচিত্রকে ব্যবচ্ছেদ করতে হয় র্যাডক্লিফকে। অবিভক্ত ভারত ভাগের জন্য দুই দেশের সীমান্তের উপর টানা এই রেখাকে "র্যাডক্লিফ লাইন" (Radclliffe partition line) বলা হয়।
র্যাডক্লিফ লাইন। Source: indiatoday |
"র্যাডক্লিফ লাইন" শুধু একটা লাইন বা রেখা না; দুই দেশের এবং বৈশ্বিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট চিন্তা করলে এটির প্রভাব আজো আছে। ধর্মের ভিত্তিতে সীমান্ত ভাগ করে র্যাডক্লিফ সাহেব তার দায়িত্ব শেষ করে দিলেও, এই সীমান্তরেখা যে কত লক্ষ মানুষের প্রাণহানীর, সম্ভ্রমহানীর এবং ভিটামাটি ছাড়ার ইতিহাস বহন করছে তার ইয়ত্তা নেই। পরবর্তীতে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে সীমান্তে অস্থিরতা কমানোসহ নানা পদক্ষেপ নেয়ার কথা থাকলেও তা আর হয়ে উঠেনি। বরং কাশ্মির ইস্যু নিয়ে দুই দেশে বারবার যুদ্ধে জড়িয়েছে , যা এখনো বিদ্যমান।
সিরিজের শেষ পর্বের শুরুতেই ফ্ল্যাশব্যাকে দেশভাগের সময়কার অস্থিরতা, সংঘর্ষ ইত্যাদির দৃশ্য দেখানো হয়। কিভাবে সারতাজের পরিবার ভারতভাগের সময় আলাদা হয়ে যায় সেটাও দেখানো হয় এই ফ্ল্যাশব্যাকে।
সব মিলিয়ে প্রথম সিজনের অসাধারণ প্লটের উপর ভিত্তি করে যেখানে ভাল কিছুর আশায় ছিলো সবাই, সেখানে শেষ পর্যন্ত দেশ বিভাগের সময় থেকে মানুষের মধ্যে চেপে রাখা ক্ষোভের প্রকাশ আর থানোস দাদুর আধা জনসংখ্যা নির্মূল নীতির মিশেল নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে দর্শকদের। তবে শেষে রেখে যাওয়া ক্লিফহ্যাঙ্গারের জন্য আরেকটি টানটান উত্তেজনায় ভরা সিজন আশা করা যেতেই পারে।
No comments:
Post a Comment